নান্দাইলের পাঁচানী উচ্চবিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও আড্ডায় মেতে ওঠেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
নান্দাইলের পাঁচানী উচ্চবিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও আড্ডায় মেতে ওঠেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

প্রতিষ্ঠার পর প্রথম পুনর্মিলনী, স্মৃতিকাতর প্রাক্তনেরা

১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠার পর ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাঁচানী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়ে গেল। কয়েক দশক পর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, আড্ডা, আলাপচারিতা, কুশল বিনিময়, স্মৃতিচারণায় মেতে ওঠেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে স্মৃতিকাতরময়।

১৯৬৩ সালে পাঁচানী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন শিক্ষাবিদ মো. আলী আফজাল খান। স্মৃতিচারণা করে বলেন, তিনি যখন এ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বয়স ছিল ২৫। বিদ্যালয়টি ছিল নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের। তিনি যোগদান করে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চবিদ্যালয়ে পরিণত করেন।

আফজাল বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি নানা উচ্চ পদে চাকরি করেছেন, করছেন। পুলিশের ডিআইজি মো. তোফায়েল আহমেদ এই বিদ্যালয়ের ছাত্র। বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এখনো বেঁচে রয়েছেন, আবার অনেকে প্রয়াত হয়েছেন। বিদ্যালয়টি এখনো সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে বন্ধুদের খোঁজ করছিলেন প্রাক্তন ছাত্র মো. আবুল মনসুর (৮৩)। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর সহপাঠীদের অনেকেই বেঁচে নেই। তবু যদি কারও দেখা পান, সেই আশায় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছেন। অনুষ্ঠানে এসে খুব আনন্দ পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

মো. আজিজুর রহমান (৬৩) বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে চাকরি করছেন। ২০২৫ সালে অবসরে চলে যাবেন। ৩৭ বছর পর বিদ্যালয়টির আঙিনায় এসে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠেন তিনি। অনুষ্ঠানে আসার পর পুরোনো সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। একই রকম ভালো লাগার কথা জানান বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্র কাস্টম কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।

নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটিসাভার গ্রামের মো. আরজ আলী বলেন, এই বিদ্যালয়ে তিনি ১০ বছর পড়াশোনা করেছেন। তারপর এখানে ২৭ বছর শিক্ষকতা করে অবসরে গেছেন। এই বিদ্যালয়ের জমিদাতা ছিলেন পাঁচানী গ্রামের গোলাম হোসেন। বিদ্যালয়ের চারপাশে জমিদাতার আখ ও বাঙ্গিখেত ছিল। ছাত্রাবস্থায় জমিদাতার অনেক আখ ও বাঙ্গি খেয়েছেন। অবসর গ্রহণের আগে জমিদাতার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। এ রকম অনেক স্মৃতি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে কথা বলেছেন। স্মৃতির রোমন্থন করতে করতে কখন যে সময় শেষ হয়ে গেছে, তা কেউ টের পাননি।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও ব্যাংক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রীর মেয়ে ওয়াহিদা হোসেন। এ ছাড়া নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ বিদ্যালয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।