করতোয়ায় নৌকাডুবি

দুই মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় প্রতিমা রানী

কবিতা-পুতুলের বাড়ির সামনে চলছে আহাজারি। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের গুরু গোবিন্দ গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

কবিতা আর পুতুল দুই বোন। হইহুল্লোড় আর দুষ্টুমিতে গোটা বাড়ি মাতিয়ে রাখত তারা। সেই বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। দুই মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা প্রতিমা রানী। তিনি শুধু প্রলাপ বকছেন, ‘আমাকে মা বলে ডাকার আর কেউ থাকল না।’ প্রতিমা রানীকে সান্ত্বনা দিতে এসে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও স্তব্ধ।

মঙ্গলবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের গুরু গোবিন্দ গ্রামে রামবাবুর বাড়ির সামনে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। রোববার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বোদা উপজেলার ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রামবাবুর মেয়ে কবিতা ও পুতুলও রয়েছে। আজ দুপুরে স্বজনদের কাছে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাকোয়া থেকে মাড়েয়া যাওয়ার পথে গুরু গোবিন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে মানুষের ভিড়। সে সময় হুইসেল বাজিয়ে এগিয়ে এলো একটি অ্যাম্বুলেন্স। শব্দ শুনেই সেখানে কান্নার রোল পড়ে গেল। এ সময় দেখা গেল, কয়েকজন নারী মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। সেখানে প্রতিমা রানীও রয়েছেন। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় এই মা।

সে সময় কথা হয় স্বপন কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি কবিতা ও পুতুলের কাকা। স্বপন বলেন, ‘রামবাবুর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পুতুল রানী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত, আর পুতুল দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। দাদা (রামবাবু) ও বৌদি (প্রতিমা) দুই মেয়েকে খুবই ভালোবাসতেন। পাড়া–প্রতিবেশীরাও তাদের খুব পছন্দ করতেন। নৌকাডুবি দাদা-বৌদিকে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেল।’ সড়কের পাশের একটি সুপারিগাছ ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিল কবিতা ও পুতুলের সহপাঠী সুফলা রানী (১০)। সে বলে, ‘এখন আমি কার সঙ্গে খেলব। কবিতা আর পুতুল নাই, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’

সামনে দুর্গোৎসব। দুর্গাপূজাকে ঘিরে যে বাড়িতে  আয়োজন চলছিল, সেই বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। কবিতা আর পুতুলের মায়ের কণ্ঠে শুধু সন্তান হারানোর বিলাপ। প্রতিমা বলছেন, ‘আমার আর মা বলে ডাকার কেউ থাকল না। ভগবান তুমি আমার কলিজা দুইটাকে কীভাবে কেড়ে নিলে? আমি কাকে নিয়ে বাঁচব, তা একটু ভাবলে না?’ কথাগুলো বলতে বলতে মূর্ছা যান প্রতিমা।