দিনাজপুরের বিরামপুর সরকারি কলেজের পাঠাগার থেকে তিন হাজারের বেশি বই চুরি হয়েছে। এসব বই কলেজের অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম চুরি করে স্থানীয় বাজারের ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ পাঠাগার থেকে বই চুরির বিষয়টি জানতে পারে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কলেজের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম ও ক্রীড়া শিক্ষক ও লাইব্রেরির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম বই চুরির ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে তাঁরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অদ্বৈত্য কুমারকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কয়েকজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে পাঠাগারে যান। তিনি গিয়ে দেখেন, কক্ষের ভেতরের বইয়ের তাকগুলো প্রায় ফাঁকা।
পাঠাগার থেকে বই লেনদেন করেন অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম। পাঠাগারের চাবিও থাকে তাঁর কাছে। অধ্যক্ষ তখন শহিদুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শহিদুল বিভিন্ন সময়ে পাঠাগার থেকে বই চুরি করার কথা স্বীকার করেন। বইগুলো তিনি কলেজের পাশের বাজারের মিন্টু মিয়াসহ বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেন বলে জানান। এ সময় শহিদুল ইসলাম দুই দিনের মধ্যে বইগুলো পাঠাগারে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেন।
কলেজ সূত্র আরও জানায়, ওই দিন সন্ধ্যায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অদ্বৈত্য কুমার বিষয়টি কলেজ পরিচালনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীমকে জানান। পরে সন্ধ্যায় ইউএনও তাঁর কার্যালয়ে কলেজের অন্য শিক্ষক ও শহিদুল ইসলামকে ডেকে পাঠান। সেখানেও শহিদুল ইসলাম পাঠাগার থেকে থেকে বই চুরির বিষয়টি স্বীকার করেন। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়, শহিদুল ইসলাম ১০ দিনের মধ্যে বই ফেরত দেবেন অথবা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই লাখ টাকা কলেজ তহবিলে জমা দেবেন।
পৌর শহরের কলেজ বাজারের ভাঙারি দোকানদার মিন্টু মিয়া বলেন, তিন-চার মাস আগে শহিদুল ইসলাম তাঁর দোকানে এক ব্যাগ পুরোনো বই বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি পুরোনো বই তিনি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে কিনেছেন। যদি জানতেন, বইগুলো পাঠাগারের, তাহলে বইগুলো কিনতেন না।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান ও ক্রীড়া শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, বই হারিয়ে বা খোয়া যাওয়ার আশঙ্কায় এক বছর ধরে পাঠাগারের বই শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নেওয়া নিষেধ আছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠাগারের বই লেনদেন ও এর দেখভাল শহিদুল ইসলামই করেন। পাঠাগারের চাবিও তাঁর কাছে থাকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঠাগারে ঢুকে তাকগুলো ফাঁকা দেখতে পান। পরে ঘটনাটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জানান। কলেজের পাঠাগারে সাহিত্য, গল্প, উপন্যাস, বিজ্ঞান ও কলেজের বিভিন্ন শ্রেণির একাডেমিক পর্যায়ের পাঁচ হাজারের বেশি বই ছিল। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, তিন হাজারের বেশি বই চুরি হয়ে গেছে।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, কলেজটি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে কলেজে ডিগ্রি পাস এবং ১৯৮৫ সালে পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রি পাস কোর্স চালু হয়। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। ২০১৮ সালে ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ হয়। কলেজটি অনেক পুরোনো হওয়ায় পাঠাগারে অনেক দুষ্প্রাপ্য বই ছিল।
বিরামপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অদ্বৈত্য কুমার বলেন, শহিদুল ইসলামকে বই চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি কতগুলো বই চুরি করেছেন, সেটি বলেননি। ধারণা করা হচ্ছে, আনুমানিক এক মিনি ট্রাক বই চুরি হয়েছে। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ইউএনওকে জানানো হয়েছে। এখন দুর্গাপূজার ছুটিতে কলেজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। এ ছাড়া কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
ইউএনও নুজহাত তাসনীম বলেন, শহিদুল ১০ দিনের মধ্যে বইগুলো ফেরত দিতে চেয়েছেন। আর না হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কলেজের তহবিলে দুই লাখ টাকা দিতে চেয়েছেন। বই চুরির বিষয়ে কলেজে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।