গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ওসিকুর ভূঁইয়াকে (২৭) গুলি করে হত্যার মামলায় ১৭ আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে জেলা ও দায়রা জজ (সেশন-১) আদালতের বিচারক মাকসুদুর রহমান এ আদেশ দেন। তাঁরা বিজয়ী চেয়ারম্যানের সমর্থক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলার পর ১৭ আসামির সবাই উচ্চ আদালত থেকে তিন সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন। আজ ছিল জামিনের শেষ দিন। তাঁরা আজ নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত রোববার মামলার প্রধান আসামি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া জামিন চাইলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
নিহত ওসিকুর ভূঁইয়া উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় চা-বিক্রেতা ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিলেন তিনি। হামলাকারীরা বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
গত ১৪ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে গোলাগুলি হলে ওসিকুর নিহত হন। ১৭ মে রাতে নিহত ওসিকুর ভূঁইয়ার বোন পারুল বেগম বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ আসামি জেলহাজতে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম জুলকদর রহমান বলেন, ওসিকুর ভূঁইয়া হত্যা মামলায় আজ ১৭ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এলাকার লোকজন বলেন, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে দুই প্রার্থী ছিলেন উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের। ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ১ হাজার ৪৯০ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একই গ্রামের বি এম লিয়াকত আলী। সহিংসতার সূত্রপাত মূলত সেখান থেকেই। গ্রামে লিয়াকত আলীর পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করেন ছবেদ আলী ভূঁইয়া। আর অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ও কালু ভূঁইয়া। কালু ভূঁইয়া কামরুজ্জামানের ছোট ভাইয়ের শ্বশুর (তালুই)। ওসিকুর লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিলেন।
ওসিকুর নিহত হওয়ার পর তাঁর লাশ নিয়ে ১৫ মে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় লোকজন। বিক্ষোভকারীরা সড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করা হয় একাধিকবার।