ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

‘আবাসিকতার কাহিনি বাদ দে, আমরা যা বলব, হলে তা–ই হবে’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে বরাদ্দ পাওয়া কক্ষ থেকে এক ছাত্রকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার হলের ৪২৮ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ৪২৮ নম্বর কক্ষে আসন বরাদ্দ পেয়ে উঠেছিলেন বলে দাবি করেন। পরে জিনিসপত্রসহ তাঁকে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আজ শনিবার হল প্রভোস্টের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ওবায়দুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটা প্রি–তদন্ত করেছি। তাতে অভিযোগের সবটুকু সত্য পাওয়া যায়নি। আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, গত ৫ মার্চ নতুন তালিকায় মাহাদী হাসান আসন বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁকে হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে তাঁর বরাদ্দ করা নতুন আসনে উঠতে পারেননি। হল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি জানান।

লিখিত অভিযোগে মাহাদী হাসান উল্লেখ করেন, তিনি কয়েক দিন ধরে ৪২৮ নম্বর কক্ষে থাকছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকের মাধ্যমে বাংলা বিভাগের একই বর্ষের তরিকুল ইসলাম ওরফে তরুণ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭–১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল ও বাংলা বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের আতাউর রহমান ওরফে রাজু তাঁকে হলে ডাকেন। তিনি হলে গিয়ে দেখতে পান, তাঁর বই–খাতা, তোশক, বালিশ কক্ষের বাইরে বারান্দায় পড়ে আছে। সেখানে আগে থেকেই তরিকুল, ফাহিম, আতাউরসহ আরও একজন উপস্থিত ছিলেন।

মাহাদী অভিযোগ করে বলেন, তিনি সালাম দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলে ফাহিম বলেন, ‘তুই মাহাদী, কোন কক্ষে থাকিস?’ জবাবে ৪২৮ নম্বর কক্ষের কথা বললে জিনিসপত্র নিয়ে সেখানে অবস্থান করার কথা বলেন। তখন ফাহিম বলেন, ‘আগে কোথায় ছিলি?’ তখন তিনি ৩০৮ নম্বর কক্ষে এক ছাত্রের কাছে অতিথি হিসেবে থাকার কথা জানান এবং এ–ও বলেন, তিনি ৪২৮ নম্বর কক্ষ বরাদ্দ পাওয়ায় সেখানে উঠেছেন। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আতাউর ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুই কে? তোকে আগে কখনো হলে দেখিনি তো! কে তোরে হলে তুলেছে? ওই সব আবাসিকতার কাহিনি বাদ দে, আমরা যা বলব, হলে তা–ই হবে।’ তরিকুল বলে ওঠেন, ‘আমারে চিনিস তুই, আমি কে? ভালোই ভালোই ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে যাবি। কোথায় যাবি,৩০৮–এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি, আমরা জানি না।’ একপর্যায়ে বারান্দায় ফেলে রাখা বই–খাতা, তোশক–বালিশসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁরা বলেন, ‘এখানে তোর সবকিছু আছে, নিয়ে চলে যাস।’ তিনি তাঁর আবাসিকতা সুনিশ্চিত, হয়রানি করার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তরিকুল ইসলাম, ফাহিম ফয়সাল, আতাউর রহমান ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তাঁরা সবাই লালন শাহ হল নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

মাহাদী হাসান নিজেকে ছাত্রলীগের একজন কর্মী বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী। যাঁরা তাঁকে বের করে দিয়েছেন, তাঁরা সবাই সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদের অনুসারী। তিনি তাঁর বৈধ আসনে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে। জিনিসপত্র এখনো কক্ষের বাইরে ছড়ানো–ছিটানো অবস্থায় আছে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি বাইরে অবস্থান করছেন।

মাহাদী হাসান আরও বলেন, ‘আমার বৈধ সিটে যে বড় ভাই ছিলেন, তিনি চলে গেছেন। সিটটি ফাঁকা পড়ে আছে। তারপরও আমাকে আমার বৈধ সিটে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। দুপুরের পর নাসিম আহমেদ ফোন করে হুমকি দিয়েছেন। সিট দেওয়া হবে কিন্তু নিউজ ঠেকাতে বলেছেন।’ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো খবর প্রকাশিত হলে তিনি মাহাদীর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের কর্মী তরিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুনেছি, সে আমাদের সংগঠনই করে। তবে তাকে চিনি না। সে তার বরাদ্দের সিটে উঠেইনি। উঠতে চেয়েছে। তবে সেখানে আরেকজন ছাত্র আছে। তার কয়েক দিন পরেই পরীক্ষা শেষ হবে। এরপরই সে চলে গেলে ওই সিটে মাহাদী উঠতে পারবে। কিন্তু সে হয়তো কোনো শিক্ষকের প্রশ্রয়ে এমন অভিযোগ দিয়েছে।’