‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের আদালত পাড়া এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। আজ বেলা ১টায় চট্টগ্রাম আদালত এলাকার চৌরাস্তার মোড় এলাকায়
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের আদালত পাড়া এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। আজ বেলা ১টায় চট্টগ্রাম আদালত এলাকার চৌরাস্তার মোড় এলাকায়

চট্টগ্রামে সাড়ে চার ঘণ্টা পর আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

সাড়ে চার ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়লেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁরা নগরের কোতোয়ালি এলাকায় অবস্থিত আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে।

বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাড়ে চার ঘণ্টা চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটক বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ওই সময় নগর ও জেলার বিভিন্ন থানা এবং কারাগার থেকে কোনো আসামিকে আনা–নেওয়া করা যায়নি। তবে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান ছিল।

হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে আজ সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত ভবনের জহুর হকার্স মার্কেট-সংলগ্ন ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এ সময় ফটকে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন। শিক্ষার্থীরা আদালত ভবনের ফটকের পাশে জেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ শুরু হলে ওই এলাকায় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক–সংলগ্ন আদালত ভবনের আরেকটি ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবী আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে আইনজীবীরা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা ভেঙে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত প্রাঙ্গণের বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচে অবস্থান নেন। এতে আদালত ভবনে ওঠানামার দুটি সড়কই বন্ধ হয়ে যায়।

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের আদালত পাড়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। এ সময় প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে ধরেন এক শিক্ষার্থী। আজ বেলা ১টায় চট্টগ্রাম আদালত এলাকার চৌরাস্তার মোড় এলাকায়

পরে আওয়ামীপন্থী আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে আইনজীবীরা এসে পাল্টা বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচে আর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা সোনালী ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেন। কয়েক দফায় বিএনপি ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তবে কেউ আহত হননি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তিন দফায় বৃষ্টি এলেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবস্থানে ছিলেন, কেউ সরে যাননি। অবশ্য আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা নিরাপদে যাতে বের হতে পারেন শিক্ষার্থীরা এক পাশে জায়গা খালি করে দেন। দর্শনার্থীরা লাইন ধরে ওই পথ দিয়ে বেরিয়ে যান। তবে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বদিউল আলম স্মারক ব্রিজের নিচ থেকে ওপরে কয়েক দফায় ওঠার চেষ্টা করেন। তবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। পাহাড় চূড়ায় আদালত চত্বরের ওই অংশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়সহ বেশির ভাগ আদালত অবস্থিত।

বেলা আড়াইটা থেকে শিক্ষার্থীদের সরে যাওয়ার জন্য আইনজীবী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়। ওই সময় শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। কিন্তু সেখানে কেউ না থাকায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের আদালত পাড়া এলাকায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। আজ বেলা ১টায় চট্টগ্রাম আদালত এলাকার চৌরাস্তার মোড় এলাকায়

ঘটনাস্থলে থাকা নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এন এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন শিক্ষার্থীরা নিরাপদে যাতে ফিরে যেতে পারেন সেই দাবি জানান। পথে তাঁরা যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন। পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করার পর শিক্ষার্থীরা সরে যান। কোনো ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলা সহসমন্বয়ক ঈশা দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম কোটার যৌক্তিক সংস্কার। কিন্তু যৌক্তিকভাবে হয়নি। জেলা ও নারী কোটা পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বৈষম্য রয়ে গেছে। আমরা এর যৌক্তিক সংস্কার চাই। পাশাপাশি সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও আগের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন চাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’