ট্রেন দুর্ঘটনা

রাত ১১টায় ফিরল ওরা ১১ জন

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিথর দেহগুলো নিয়ে আসা হয়
ছবি: প্রথম আলো

হাটহাজারীর আমানবাজার-যুগীর হাট সড়ক দিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে। সাইরেনের শব্দ যেনো আর্তনাদের মত কানে বাজছে। তখন সড়কের দুপাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন লোকজন। সবাই পাথরের মত নীরব। মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের লাশ রাত ১০টার দিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এরপরই অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশগুলো নিয়ে আসা হয় খন্দকিয়া গ্রামে।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিথর দেহগুলো নিয়ে আসা হয়। এ সময় কথা হয় স্থানীয় রিকশাচালক তফাজ্জল আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৬০ বছর বয়সে একসঙ্গে এত অ্যাম্বুলেন্স সড়কে ঢুকতে দেখেননি কখনো।

শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে একই সড়ক দিয়ে মাইক্রোবাসে করে বেড়াতে গিয়েছিল কিশোর–তরুণেরা। রাতে ফিরেছেন লাশ হয়ে। দুপুরে মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা ১১ জন নিহত হন। আহত হন অন্তত পাঁচজন। তাঁরা সবাই খন্দকিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাইক্রোবাসের চালক ও সহকারী ছাড়া বাকিরা ‘আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টার’–এর ছাত্র ও শিক্ষক। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত ১১ জনের একজন ইকবাল হোসেন হৃদয়। সে স্থানীয় কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষাথী। তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি রাত ১১টার দিকে খন্দকিয়া গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টারের বাড়িতে আনা হয়। বাড়ির উঠানে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না ঢুকতেই তাঁর মা কামরুন নাহার কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানহারা মা তখন বিলাপ করতে থাকেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ‘সকালে গিয়ে এখন লাশ হয়ে ফিরলা। আমি কী নিয়ে থাকব? আমাকে ছাড়া তুমি কোথায় যাও? মায়ের এত প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবে ইকবাল। তাঁর যে সেই শক্তি নেই। অগত্যা কিছুক্ষণ পর থেমে থায় মায়ের বিলাপ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। বাড়ির উঠান আর ঘর ভরা লোকজন। সবার চোখে–মুখে বিষাদের ছায়া।

ইকবাল নিহতের খবর শুনে রাতে তাঁর বাড়িতে দেখতে যান আত্মীয় মো. আনোয়ার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জলজ্যান্ত একটি ছেলে এভাবে লাশ হয়ে পড়ে আছে। কীভাবে সহ্য করা যায়?

ইকবালের বাড়ির উল্টো দিকে নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাড়িতে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্স রাখা। সেখানে জিয়াউলের নিথর দেহ। তাঁর বাবা আবদুল হামিদ বলেন, মুদির দোকানে চাকরি করে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছি। আমার কষ্ট হচ্ছে দেখে ছেলে কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করে। এখন আমার কি হবে? জিয়াউল চট্টগ্রামের ওমর গণি এম ই এস কলেজে গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

যুগীর হাটের উত্তরে সাব রেজিস্টার বাড়ির গোলাম মোস্তফা নিরুর লাশও অ্যাম্বুলেন্সে। তিনি মাইক্রোবাসটির চালক ছিলেন। তাঁর লাশ আসার পর তিন বছরের মেয়ে রুহি আক্তার দেখতে আসে। অবুঝ শিশুটি বুঝতে পারছে না তাঁর বাবা চলে গেছে।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে খন্দকিয়া ছমদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মো. সাজ্জাদের নামাজে জানাজা হয়। তাঁর বন্ধু আবদুল্লাহ মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ এখানে নানার বাড়িতে থাকতেন। তাঁর লাশ দাফনের জন্য নিজ বাড়ি হাটহাজারীর দক্ষিণ মাদাশায় নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. তোফায়েল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বাকিদের নামাজে জানাজা শনিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে।