ইটভাটাটি খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নে। এটির মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমীর আলী।
আইন লঙ্ঘন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ৩১ বছর ধরে অবৈধভাবে এখানে ইটভাটা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। এই ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া ও ইটবাহী যানবাহন চলাচলের কারণে সৃষ্ট ধুলাবালুর কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এই ধোঁয়া ও ধুলাবালুর কারণে কয়েক শ শিক্ষার্থীসহ এলাকার হাজারো মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইটভাটাটি খুলনার কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ইটভাটার মালিক কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আমাদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমীর আলী গাইন। তার নিজ বাড়ির সামনে ফসলি জমিতে ১৯৯২ সালে মেসার্স এবিএম ব্রিকস নামে তিনি ইটভাটাটি স্থাপন করেছেন। শুরু থেকেই এর বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে জরিমানা আদায় করতে দেখা গেলেও কখনো বন্ধ হয়নি ভাটার কার্যক্রম। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে সেখানে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা ভাটাটি বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মালিক আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এখানে ইট তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তা ধরে ১০০ মিটারের মতো পশ্চিমে আগালেই সড়কের পাশে ওই ইটভাটা। ইটভাটায় পুরোদমে চলছে ইট প্রস্তুতের কার্যক্রম। ভাটার প্রায় ৫০–৬০ মিটারের মধ্যে আমাদী তকিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়, আমাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী ও কৃষি ব্যাংকের শাখা অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়সহ একটি বাজার। পাশেই রয়েছে ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
গ্রামবাসী জানান, প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস ওই গ্রামে। শুরু থেকেই ভাটার সব কার্যক্রম বন্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন তাঁরা। অনেকবার মানববন্ধনসহ সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছেন তাঁরা।
গ্রামের আবিদ হাসান বলেন, ভাটা থেকে ইট পরিবহনের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ট্রলি ও ট্রাক চলাচল করায় বিদ্যালয়গামী শিশুশিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকে। বিদ্যালয়ে যাওয়া ও আসার সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় অভিভাবকদের।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারা অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু মেসার্স এবিএম ব্রিকস এই আইন লঙ্ঘন করে ইটভাটাটি স্থাপন করেছে।
ইটভাটাটির ব্যবস্থাপনায় থাকা টোটন হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, উপজেলার সরকারি বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকে ইট নেওয়া হয়। ইটের চাহিদা থাকায় এখনো ইট তৈরি ও পোড়ানো হচ্ছে।
ইটের ভাটা পরিচালনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে ভাটা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হলেও অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
অনুমোদন ছাড়া কীভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে মেসার্স এবিএম ব্রিকসের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা আমির আলী গাইন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী অনেক কিছুই তো করা যায় না। তারপরও আমার ইটভাটার কারণে এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় আশপাশের মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। তা ছাড়া হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে আসা লোকজনকেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ইকবাল হোসেন বলেন, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার কোনো বৈধতা নেই। শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।