রাজবাড়ীর কলেজছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী তানভীর শেখ হত্যার বিচার চেয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে এবং পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নিহত তানভীরের বন্ধু, সহপাঠী, স্বজন ও এলাকাবাসী এ কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল শনিবারও একই দাবিতে শহরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আজ দুপুরে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমে মানববন্ধন করা হয়। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। এখানে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাজবাড়ী পৌরসভার সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা ইয়াসমিন, নিহত তানভীরের মা সাহেদা বেগম, বন্ধু তাহসীন বিন আতিয়ার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিরাজুল মাজীদ, স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান, খায়রুল ভূঁইয়া, আশিকুর রহমান প্রমুখ।
নিহত তানভীর শেখ রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর এলাকার বাবু শেখের ছেলে। তিনি ডা. আবুল হোসেন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তানভীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
মানববন্ধনে নিহত তানভীরের বন্ধু তাহসীন বিন আতিয়ার বলেন, তানভীর পরোপকারী, হাস্যোজ্জ্বল ও প্রতিবাদী তরুণ ছিলেন। পুলিশ আসামি ধরতে ৪৮ ঘণ্টার সময় নিয়েছিল। পাঁচ দিন হলেও এখনো মূল আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ অন্যরা গ্রেপ্তার না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মিরাজুল মাজীদ বলেন, ‘তানভীর জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অনেকে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন। পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’
নিহত তানভীরের মা সাহেদা বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র বুকের ধনকে যারা কাইড়া নিছে, তাদের ফাঁসি চাই। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। মামলার বাদী আমার ভাইকে নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আমি ওর মা, আমার হারানোর কিছু নেই। ভাইয়ের পরিবর্তে বাদী আমি হতে চাই।’
বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে তানভীর হত্যার বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এদিকে তানভীর শেখের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল হান্নানের অপসারণ দাবি করেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, তানভীরের মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মামা আলম শেখ বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১২ নভেম্বর রাত নয়টার দিকে বাসা থেকে ১০০ গজ দূরে বিনোদপুর সর্বজনীন মন্দির ও স্থানীয় সাহবুদ্দিন মুন্নুর মুদিদোকান-সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন তানভীর। আকস্মিকভাবে ১০–১২ জন দুর্বৃত্ত এসে তাঁদের ঘিরে ধরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তানভীরকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তাঁর পেটে ও পিঠে কোপালে তিনি রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।