কাজে ফিরেছেন রামেকের ইন্টার্নরা, রাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

গত বুধবার রাত থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলায় কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেক রোগীকে ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রামেকের জরুরি বিভাগের সামনে
ছবি: শহীদুল ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সংঘর্ষের প্রতিবাদে ডাকা কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে ফিরেছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। আজ শুক্রবার সকালে তাঁরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজ শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন।

এদিকে রামেক হাসপাতালে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকেলে নগরের রাজপাড়া থানায় হাসপাতালের পক্ষে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে কোনো শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন হাসপাতালের ওয়ার্ড, বিভিন্ন ব্লকের কক্ষের দরজা–জানালা, ফুলগাছের টব ভাঙচুরসহ চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মচারীদের গালিগালাজ, লাঞ্ছিত ও মারধর করা হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজে ফিরেছেন। আগের দিন বিকেল থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি অংশ জরুরি বিভাগে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন হাসপাতালের অবস্থা ভালো।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে শামীম ইয়াজদানী বলেন, গতকাল তাঁরা হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও ইউনিটপ্রধানদের সঙ্গে সভা করেছেন। সেখানে আলোচনা হয়, রাবির নিহত শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। এখন ওই শিক্ষার্থীকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন কি না, পরে ওই ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য এখানে হামলা চালানো হলো কি না—এসব বিষয় নিশ্চিতের জন্য তাঁরা মামলার দিকে গেছেন। আবার এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও দাবি ছিল।

শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মারা যাওয়ার পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে রাজশাহী মেডিকেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর চালায়

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রফিকুল আলম বলেন, হাসপাতালের ঘটনায় তাঁরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তাঁরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছেন।

এর আগে গত বুধবার রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, চিকিৎসার অবহেলায় সহপাঠী মারা যাওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ওই সময় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসার সদস্যরা তাঁদের মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁরা হাসপাতালের গাছের টব ভাঙেন।

এ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি করেছে।