এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একই কারণে আরও দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মোট ভোটারের এক শতাংশের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। বাকি তিনটি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দুপুরের পর যাচাই-বাছাইয়ের কথা আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফিরোজুর রহমান ছাড়া অন্য দুজন হলেন জহিরুল হক চৌধুরী ও কাজী জাহাঙ্গীর। তাঁরা ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০ জন ভোটারের স্বাক্ষর যাচাই করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল হক চৌধুরীর সমর্থনকারী ভোটারের স্বাক্ষর তালিকার ১০টি স্বাক্ষরের মধ্যে ৯টি, ফিরোজুর রহমানের ১টি এবং কাজী জাহাঙ্গীরের ১০টি স্বাক্ষর ত্রুটিপূর্ণ পাওয়ায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা নির্ধারিত সময়ে (৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম।
ফিরোজুর রহমান সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের টানা ২৬ বছরের চেয়ারম্যান ছিলেন। সর্বশেষ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ।
ফিরোজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সমর্থনকারী ১০ জন ভোটারের স্বাক্ষর যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। একজনের স্বাক্ষরে মিল না থাকায় আমার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। শুনেছি এলাকায় তদন্তের সময় ভোটার মীর বাইজিদ হোসাইন স্বাক্ষর করেছেন বলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বলেছেন। কিন্তু সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) গত শুক্রবার একটি বিয়েবাড়ি থেকে বাইজিদকে তুলে নিয়ে যান। রাতের বেলা মুসার লোকেরা তাঁকে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ছেলের সন্ধানে তাঁর বাবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁকে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কেউই আমার কথা শুনছেন না।’
গতকাল শনিবার আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে ফিরোজুর রহমান তাঁকে সমর্থনকারী এক ভোটারকে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন। সংসদ সদস্যের এপিএস আবু মুসা আনসারী ওই ভোটারকে তুলে নিয়ে গেছেন বলে তিনি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে আবু মুসা আনসারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ফিরোজুর রহমান একেক সময় একেক কথা বলেন। তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। সংসদ সদস্যের সঙ্গে থাকেন বলে তাঁর (মুসা) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।
যাচাই-বাছাই শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে সবার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থা দেখে ভালো লাগছে। ফিরোজুরকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘শুনেছি ভুয়া স্বাক্ষর নেওয়ার কারণে একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এমনটি হয়ে থাকলে বিষয়টি লজ্জার ও দুঃখজনক।’