নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য

মিয়ানমারে সংঘাত

গোলাগুলির শব্দবিহীন রাত পার তিন সীমান্তের মানুষের

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের সীমান্ত এলাকার লোকজন গতকাল রোববার রাতে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের ভারী আওয়াজ পাননি। শান্ত রাত পার করেছেন তিন উপজেলার সীমান্তের বাসিন্দারা।

স্থানীয় লোকজন বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে সীমান্ত থেকে একটু দূরে শিলখালী ও বলিরপাড়ার দিকে। এ কারণে সেখানকার গোলাগুলির শব্দ এপারে কম শোনা যায়। তবে মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটলে টের পান এপারের মানুষ।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকার কবির আহমদ (৪৩) বলেন, গতকাল রাতে কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাননি তিনি, তবে গোলাগুলি কম হলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা আছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকার সাবেক স্কুলশিক্ষক নুরুল বশর (৫০) বলেন, গত শুক্রবার থেকে এই সীমান্তে কোনো গোলাগুলির আওয়াজ পাননি। এ কারণে তাঁরা ধরে নিয়েছেন, ওপারের ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি এবং ওই এলাকায় সরকারি কোনো বাহিনী নেই।

তিন দিন পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে গত শনিবার রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছিল। তবে গতকাল রাতে কোনো ধরনের গোলযোগের আওয়াজ পাননি ওই এলাকার লোকজন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। গত রাতে ওপারে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরাও শান্তিতে রাত কাটিয়েছি।’

২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ চলছে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। ওই সময়ে মিয়ানমার সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। তাঁরা বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে।

কয়েকটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে চাকমাকাটা, কোয়াংচিমন ও কুমিরখালী ঘাঁটি দখলে নিতে যুদ্ধ চলছে। এসব এলাকায় কয়েক শ রোহিঙ্গা আছেন। এ ছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিল ও উনচিপ্রাং সীমান্তের ওপারে সোজা বিপরীতে সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে বিজিপির শিলখালী ও বলিরবাজার ফাঁড়ি আছে। এ দুটি ফাঁড়ির দখল নিয়েও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এলাকাগুলোয় বসবাস করেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তাঁরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে সীমান্তের একদম কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছেন। নাফ নদীতে ১০ থেকে ১২টি ডিঙি নৌকা ভাসছে। প্রতিটি ডিঙিতে ১৫ থেকে ২০ জন করে আছেন বলে জানান সীমান্ত এলাকা টেকনাফের মাঝেরপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং ও কানজড় পাড়ার লোকজন।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ওপার থেকে যাতে কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক পাহারায় আছে। ইতিমধ্যে এপারে আসতে চেষ্টা করা অনেক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার লুৎফুর লাহিল মাজিদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওপার থেকে একজন রোহিঙ্গাও যাতে ঢুকতে না পারে, এ ব্যাপারে তাঁরা সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় আছেন।