সাতক্ষীরা থেকে ভেটখালী সড়কের দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার।
সাতক্ষীরার ব্যস্ততম সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি সংস্কারের প্রকল্প অনুমোদনে দেরি হওয়ায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর আপৎকালীন হিসেবে কার্পেটিংয়ের ওপর একাধিক স্থানে ইটের সলিং (এইচবিবি) করে দিয়েছে। বর্ষায় পিচ্ছিল হয়ে প্রতিনিয়ত ইট বিছানো অংশে ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের চালকেরা আহত হচ্ছেন বেশি। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কটি মূলত সাতক্ষীরা-ভেটখালী সড়কের অংশ। সাতক্ষীরা থেকে ভেটখালী সড়কের দৈর্ঘ্য ৬২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৫ কিলোমিটার।
সাতক্ষীরা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা থেকে ভেটখালী চার লেনের সড়ক করার জন্য ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে তারা একটি প্রকল্প তৈরি করে ২০২২ সালের ২ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটি ওই বছর ১১ এপ্রিল পরিদর্শনে এসে নকশা পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ৩৪ ফুট প্রস্থ ও কালীগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত সড়ক ২৪ ফুট প্রস্থ রেখে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর জন্য বলে। চলতি বছর ২৩ মে কারিগরি কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ৭৪১ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে একটি প্রকল্প পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ কে এম রেজওয়ানুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রকল্পটি আবার পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার চার লেন ও কালীগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ২৪ ফুট প্রস্থ রেখে প্রকল্প তৈরি করার জন্য বলা হয়। সেই অনুযায়ী, ১ আগস্ট সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজাহারুল ইসলাম ৮২২ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। প্রকল্পটি বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এভাবে চলছে চিঠি-চালাচালি।
গত রোববার সরেজমিনে সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটিতে ছোট-বড় গর্ত দেখা গেছে। সড়ক দেবে গিয়ে এমন উঁচু-নিচু অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যেসব স্থানে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, এমন ১৪টি স্থানে ইট বিছিয়ে ৩০ থেকে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ইটের সলিং হয়েছে। পাশাপাশি সওজ নিজেই খোয়া আর পিচ দিয়ে মেরামত করছে। মেরামত করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার মধ্যে এসব পিচ আর খোয়ার কাজ চলছে। সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের আলীপুর, আশু মার্কেটের সামনে, কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, পারুলিয়া, উত্তর পারুলিয়া, সখীপুর মোড়, দেবহাটা ফায়ার সার্ভিসের সামনে, সখীপুর, নলতা চৌরাস্তা, হিজলা মোড়, ভাড়াশিমুলিয়া, কুকুডাঙ্গার মোড় ও কালীগঞ্জ বাসটার্মিনাল এলাকার পিচের সড়কের ওপর ইট বিছিয়ে সলিং করা হয়েছে।
এই সড়কে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান কুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু রায়হান। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত করতে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সম্পূর্ণ সড়কটিই কমবেশি খারাপ। তারপর পিচের সড়কের ওপর হেরিংবন্ড করায় বৃষ্টি হলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে মানুষ আহত হচ্ছেন।
দেবহাটা সখীপুর এলাকার কলেজছাত্র রেজাউল হাসান বলেন, ‘পিচের সড়কের ওপর হেরিং বোন বন্ডে (ইটের সলিং) যেন সাতক্ষীরা স্টাইল। এমন কোথাও দেখিনি। হেরিংবন্ডের কারণে চলাচলে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রে যাতায়াত করার সময় হেরিংবন্ডের ওপর ঝাঁকি খেতে খেতে জীবন বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। আর অসুস্থ মানুষ থাকলে তো কথাই নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আজাহারুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কালীগঞ্জ সড়কটি সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে সংস্কার করা হয়। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় মেরামত না করায় চলাচল উপযোগী নেই। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চলাচল উপযোগী রাখতে যেসব স্থানে পানি জমে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, ওই স্থানে হেরিং বোন বন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট ছোট নষ্ট স্থানে সওজ নিজ উদ্যোগের মেরামত করে সড়ক চালু রাখার ব্যবস্থা করেছে। তবে আশা করা যাচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এ সড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি অনুমোদন হতে পারে। তখন সব সমস্যা দূর হবে।