মো. আল আমিন মিয়াকে ‘মৃত’ দেখিয়ে হত্যা মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাভারের আশুলিয়া থানায় আল আমিন মিয়া
মো. আল আমিন মিয়াকে ‘মৃত’ দেখিয়ে হত্যা মামলা করেছেন তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাভারের আশুলিয়া থানায় আল আমিন মিয়া

স্বামীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে করা মামলার বাদী আদালতে হাজির হন না, রয়েছে সমন

জীবিত স্বামীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে আদালতে হাজির হচ্ছেন না বাদী কুলসুম বেগম। এ কারণে আদালত থেকে তাঁর নামে জারি করা সমন সপ্তাহখানেক আগে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানায় পৌঁছেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বাদী কুলসুম বেগম মামলার এজাহারে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছিলেন ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরী গ্রামে। আজ বুধবার গ্রামে গিয়ে ওই বাড়ি তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বাড়িতে কুলসুম ও তাঁর বাবা-মা বাড়িতে থাকেন না। মাঝেমধ্যে আসেন। সবশেষ ১০ থেকে ১২ দিন আগে কুলসুম বেগম বাড়িতে এসেছিলেন। এই পরিবারের সদস্যরা মূলত আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় থাকেন, যে এলাকা কুলসম তাঁর বর্তমান ঠিকানা হিসেবে এজাহারে দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম তাঁর স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। তিনি এজাহারে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে তাঁর স্বামী মো. আল আমিন মিয়া (৩৪) নিহত হয়েছেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরে এটি ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়।

তবে মো. আল আমিন মিয়া গত সোমবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হাজির হয়ে জানান, তাঁর অজান্তে স্ত্রী তাঁকে ‘মৃত’ দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন। আল আমিন দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুর এলাকার বাসিন্দা। পরে গতকাল মঙ্গলবার আশুলিয়া থানা-পুলিশও তাঁর বক্তব্য নেয়।

ঘিওর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সিংজুরী বাজার। আজ বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, বাজার থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ গজ দক্ষিণে স্বল্প সিংজুরী গ্রাম। গ্রামের অন্য বাড়িঘর থেকে কিছুটা দূরে কুলসুমদের বাড়িতে দোচালা টিনের দুটি ঘর। ঘর দুটির দরজায় তালা ঝুলছে।

বাড়ির পাশে কথা হয় কয়েকজন আত্মীয় ও প্রতিবেশীর সঙ্গে। সেখানে মো. চঞ্চল, সোনা মিয়াসহ আরও কয়েকজন বলেন, কুলসুমের বাবা আবদুল খালেকের বাড়ি বরিশালে। তিনি স্বল্প সিংজুরী গ্রামে মেহেরজান বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক বছর পর মেহেরজান বেগম বিদেশে যান। দুই সন্তান ফাতেমা ও কুলসুমকে নিয়ে খালেক আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। পরে কুলসুমের মা দেশে এসে স্বল্প সিংজুরী গ্রামে বসতবাড়ি করেন। স্বামীর সঙ্গে আশুলিয়ায় থাকলেও মেহেরজান গ্রামের বাড়িতে মাঝেমধ্যে এসে থাকতেন।

প্রতিবেশীরা আরও জানান, কুলসুমের একাধিক বিয়ে হয়েছে। প্রায় আট বছর আগে খালাতো ভাই শান্ত মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। দুই বছর পর তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর প্রায় ছয় বছর আগে আল আমিন মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ধূর্ত প্রকৃতির কুলসুম মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়িতে এলেও বেশি সময় থাকতেন না।

গ্রামের শহীদ মিয়া নামের এক যুবক বলেন, প্রায় দুই বছর আগে কুলসুম বেগম বড় বোন ফাতেমার বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ১৮ হাজার টাকা ধার নেন। সেই টাকা তিনি এখনো পাননি।

কুলসুমদের বাড়ির ঘেঁষে চাচাতো মামা আরজু মিয়ার বাড়ি। চাচাতো মামি রিনা আক্তার বলেন, মাঝেমধ্যে কুলসুম এ বাড়িতে আসতেন। তবে বেশি সময় থাকতেন না। ১০ থেকে ১২ দিন আগেও তিনি বাড়িতে এসেছিলেন। তবে আধা ঘণ্টাও তিনি বাড়ি থাকেননি। কুলসুমদের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই।

বাদী কুলসুম বেগম মামলাটির সাক্ষীও। মুঠোফোনে কথা হলে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ৮ থেকে ১০ দিন আগে আদালত থেকে সমন জারি করা হয়েছে। আদালতে বাদী ও সাক্ষী কেন হাজির হচ্ছেন না, এই মর্মে তাঁর কাছে আদালত থেকে একটি নোটিশ এসেছে। এ ঘটনার বিষয়ে এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।