সাভারে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা, বাদীকে চেনে না পরিবার

ঢাকা জেলার মানচিত্র
ঢাকা জেলার মানচিত্র

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনে স্কুলছাত্র আস-সাবুর (১৬) নিহতের ঘটনায় তাঁর পরিবার মামলা করেছে। গতকাল রোববার রাতে নিহতের মা রাহেন জান্নাত ফেরদৌসী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলাটি করেন।

এই মামলায় ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে।

এর আগে গত শুক্রবার আস-সাবুর নিহতের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেছিলেন সাহিদ হাসান ওরফে মিঠু নামের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায়। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদসহ আওয়ামী লীগের ১১৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

রাহেন জান্নাত ফেরদৌসী জানান, শুক্রবার দায়ের করা মামলার বাদীকে তাঁরা চেনেন না। ওই মামলায় ঘটনার বিবরণ ও আসামিদের বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

রাহেন জান্নাত ফেরদৌসীর করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সকালে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় আস-সাবুর। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাইপাইলে আন্দোলনকারীদের মিছিলে গিয়ে বড় ভাইকে মুঠোফোনে জানায়, সে মিছিলে গিয়েছে। তিনি (রাহেন জান্নাত) ছেলেকে বাসায় ফিরে আসতে বলেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রতিবেশী এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় আস–সাবুর। বেলা চারটার পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ ছিল। খোঁজাখুঁজির পর পরদিন বিকেল পাঁচটার দিকে আস-সাবুরের বড় ভাইয়ের মুঠোফোনে কল দিয়ে অপরিচিত একজন জানান, পিকআপে মরদেহের সঙ্গে থাকা পুড়ে যাওয়া মুঠোফোনে সিমটি পেয়েছেন। পরে তাঁরা পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যান।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এখানকার সাবেক এমপিসহ (সাইফুল ইসলাম) যাঁদের জন্য এ গন্ডগোল হইছে, তাঁদের চার-পাঁচজনের নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম। ওই লোকটার জন্য (সাহিদ হাসানের) করতে পারলাম না।
রাহেন জান্নাত, নিহত শিক্ষার্থীরা মা

সাহিদ হাসানের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আশুলিয়ার জামগড়া শিমুলতলা এলাকার বাসিন্দা এনাফ নায়েদের ছেলে আস-সাবুর (১৬) স্থানীয় শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে সে বাসা থেকে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাইপাইল এলাকায় যায়। বেলা ২টার দিকে তিনি (সাহিদ হাসান) জানতে পারেন, আস-সাবুর বাইপাইল মোড়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখমসহ আস-সাবুরকে মৃত অবস্থায় পান।

রাহেন জান্নাত অভিযোগ করেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এখানকার সাবেক এমপিসহ (সাইফুল ইসলাম) যাঁদের জন্য এ গন্ডগোল হইছে, তাঁদের চার-পাঁচজনের নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম। ওই লোকটার জন্য (সাহিদ হাসানের) করতে পারলাম না। তিনি ১১৯ জনের নাম দিছেন। এমনকি আমার ছেলেকে যিনি প্রাইভেট পড়াতেন, তাঁর অসুস্থ শ্বশুরের নামও দিয়েছেন। শত্রুতামূলকভাবে এটি করেছেন। ওই মামলায় বলা হয়েছে, আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু আমার ছেলেকে পিটিয়ে, গুলি করে হত্যার পর হত্যাকারীরা নৃশংসভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে।’

রাহেন জান্নাত আরও বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন, ওই লোককে আমরা চিনি না। গতকাল (রোববার) সকালে তাঁকে কল দিয়েছিলাম। আমার ও আমার ছেলের পরিচয় দেওয়ার পরও তিনি চিনতে পারেননি। পরে তাঁকে বাসায় আসতে বলি। কিন্তু সে আর আসেনি। আমার মৃত সন্তানকে নিয়ে তিনি ছিনিমিনি খেলছেন। আমি ওনার নামে মামলা করব।’

এ বিষয়ে জানতে সাহিদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ বলেন, ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।