সরকারি কলেজের অধ্যাপক বাবা মো. জামাল উদ্দিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ছবি এখন কেবলই স্মৃতি
সরকারি কলেজের অধ্যাপক বাবা মো. জামাল উদ্দিন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ছবি এখন কেবলই স্মৃতি

‘এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে চলে গেল’

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লায় আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার (২৪) মা তাহমিনা শবনমের আহাজারি থামছে না। গতকাল শুক্রবার রাতে তিনি বলছিলেন, ‘গত রোজায় সরকারি কলেজের অধ্যাপক স্বামীকে হারালাম। এবার মেয়েকে হারালাম। এক বছরের মধ্যে স্বামী ও মেয়ে আমার কাছ থেকে চলে গেল। মেয়ে আমার বিচারক হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা তাকে বাঁচতে দিল না। ও সাহসী মেয়ে ছিল। বিচার না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল।’

মা তাহমিনা শবনমের অভিযোগ, এক বছর আগে থেকে অবন্তিকার এক সহপাঠী নানাভাবে তাঁকে উৎপীড়ন করতেন। এ নিয়ে তাঁর মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে নালিশ করেন। কিন্তু সহকারী প্রক্টর ঘটনার বিচার করেননি, উল্টো মেয়েকে ডেকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ওই ছেলের পক্ষ নেন তিনি। তখন ওই ছেলে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, হুমকি দিতেন। এসব ঘটনার বিচার চেয়ে না পেয়ে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়ের এমন মৃত্যু অপ্রত্যাশিত।

তাহমিনা শবনম বলেন, ‘মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাকে পানি দিয়ে গেল এক গ্লাস। এর কিছুক্ষণ পর ওর রুমে ফ্যানের শব্দ না পেয়ে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া মেলেনি। পরে ছেলেকে নিচে পাঠাই। ও দারোয়ানকে নিয়ে মই দিয়ে পূর্ব পাশের জানালা খুলে দেখতে পায়, ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে ও। এরপর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা পুলিশের একজন সদস্যসহ আমরা ওকে নামাই। এরপর কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিই। সেখান থেকে মেয়েকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

গতকাল ইফতারের পর মেয়েকে বিষণ্ন দেখেছিলেন মা তাহমিনা শবনম। তখন মন খারাপ কেন জানতে চেয়েছিলেন মা। অবন্তিকা শুধু বলেছিলেন, ‘এমনি।’ কিন্তু মেয়ে যে আত্মহত্যা করবে, এটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি। অবন্তিকা নানা সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানালেন মা।

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বাবা মো. জামাল উদ্দিন মৃত্যুর আগে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেছেন। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল রোজার সময় তিনি মারা যান। জামাল উদ্দিনকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজ ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার সময় কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা মহাজন বাড়ি এলাকায়। অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি উপস্থাপনা করতেন। অবন্তিকার ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী।

অবন্তিকার মামা কুমিল্লা শহরতলির চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা এ বি এম লুৎফর আনোয়ার ভূঞা বলেন, ‘এক বছরের মাথায় আমার বোনটি স্বামী ও মেয়েকে হারাল। এ শোক কেমনে সইবে! এটা আত্মহত্যা নয়, তিলে তিলে মানসিক নির্যাতন করে মারা। এর বিচার চাই আমরা।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক নিয়ামুল হোসাইন বলেন, এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আজ শনিবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত হবে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।