বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত আবদুল্লাহ আল মাহিন (১৬) ও নাজমুল ইসলাম ওরফে রাজু (৩৯) নামের দুজনের মরদেহ প্রায় তিন মাস পর কবর থেকে তোলা হয়েছে।
দুটি মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পরিবারের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশের পর আজ বুধবার সকালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মরদেহগুলো তোলা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নাজমুল ময়মনসিংহ নগরের সেহরা মুন্সিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। আজ সকাল ১০টার দিকে নগরের কালীবাড়ি কবরস্থান থেকে নাজমুলের মরদেহ তোলা হয়। এ সময় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট এস এম নাজমুস ছালেহীনের পাশাপাশি সিআইডি, থানা-পুলিশের সদস্য ও নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নাজমুলের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট উত্তরা পূর্ব থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রেজাউল। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটির তদন্তকাজ করছেন সিআইডির পরিদর্শক শহীদুর রহমান। তিনি বলেন, এর আগে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি দাফন করা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে আদালতে মরদেহের ময়নাতদন্তের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। ২৩ অক্টোবর আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আজ মরদেহটি তোলা হয়।
নাজমুল ইসলাম উত্তরার আজমপুর এলাকায় দরজির কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। ৫ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দমিছিলে গিয়ে উত্তরা পূর্ব থানার সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে স্বজনেরা ওই রাতেই মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যান। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৬ আগস্ট ময়মনসিংহ নগরের কালীবাড়ি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
অন্যদিকে আবদুল্লাহ আল মাহিন ময়মনসিংহ নগরের পুরোহিতপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্র ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হন মাহিন। পরে তাঁকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই মারা যান। ৫ আগস্ট সকালে তাঁর মরদেহ ময়মনসিংহ নগরের ভাটিকাশর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আদালতের আদেশে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল ইমরানের উপস্থিতিতে আজ সকালে মাহিনের মরদেহ তোলা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা জামিল হোসেন ও মা সামিরা জাহান। তাঁরা ছেলে হত্যার বিচার চেয়েছেন।
মাহিন নিহত হওয়ার ঘটনায় ২১ আগস্ট বাবা জামিল হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছেন সিআইডির পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান।