লালমনিরহাটের আদিতমারীতে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া শিক্ষক নুরুল আমিনকে (৫৪) পাঁচ দিন পর রাজধানীর তেজগাঁও থেকে উদ্ধার করেছে আদিতমারী থানার পুলিশের একটি দল। এ সময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজ বুধবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন। এ সময় লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আতিকুল হক, কোর্ট পরিদর্শক নুরুজ্জামান চৌধুরী ও আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
নুরুল আমিন আদিতমারীর দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পুলিশের পরিচয়ে তাঁকে আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ৬ জানুয়ারি সকালে অপহরণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন জানায়, পুলিশের কেউ তাঁকে তুলে আনেনি। অন্য কেউ এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এ ঘটনায় নুরুল আমিনের ছেলে আবদুর রউফ (২৮) বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় ৭ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ভোলার পাড়ার বেলুয়া বাজারের মজিবর রহমানের ছেলে আবদুল বারী (৪৩) ও নেত্রকোনার পূর্বধলার ভূগী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শফিউল আলম (৩৪)।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা নুরুল আমিনকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী, ভাই ও অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা এসপি অফিসের লোক বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ছয়টায় অজ্ঞাতনামা ১২-১৩ জন একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস ও সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কারযোগে নুরুল আমিনের নামুড়ি গ্রামের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান। অপহরণকারীদের একজন বাড়ির প্রধান ফটকের দেয়াল টপকে বাড়িতে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন। এরপর বাইরে থাকা অন্যরা ঢুকে পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রথমে নুরুল আমিনের ভাই রুহুল আমিনের ঘরে ঢুকে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে (নুরুল আমিন ভেবে) নিয়ে যেতে থাকেন। তখন নুরুল আমিন ঘর থেকে বের হলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা রুহুল আমিনকে ছেড়ে দিয়ে নুরুল আমিনকে ধরেন এবং তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকেন। এ সময় নুরুল আমিনের স্ত্রী, ভাই ও অন্যরা এগিয়ে এসে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে তাঁরা এসপি অফিসের লোক বলে জানান।
এ সময় নুরুল আমিনের ভাই রুহুল আমিন (৪০) ও চাচা আবু তালেব (৭০), নুরুল আমিনের ছেলে অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র দেখতে চান এবং এভাবে নিয়ে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কোনো কিছু না বলে এলোপাতাড়ি মারপিট করে আবু তালেব ও রুহুল আমিনকে গুরুতর জখম করেন। এ সময় অপহরণকারীরা নুরুল আমিনকে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে আদিতমারী হয়ে লালমনিরহাট অভিমুখে নিয়ে যায়।
মামলার পর আদিতমারী থানার পুলিশ নুরুল আমিনকে উদ্ধারে মাঠে নামে। পাঁচ দিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে নুরুল আমিন ও অপহরণকারীদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে আদিতমারী থানার পুলিশের একটি দল ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল আমিনকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে অপহরণের সঙ্গে জড়িত আবদুল বারী ও শফিউল আলমকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অপহরণের শিকার নুরুল আমিন ও অপহরণকারীদের মধ্যে টাকা লেনদেনের কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য ও অপহরণের প্রকৃত কারণ পরবর্তী তদন্ত সাপেক্ষে উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। উদ্ধার নুরুল আমিনকে চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।