সারি সারি সাজানো টেবিল। তাতে রাখা আছে ছোট ছোট বয়াম। বয়ামের ভেতরে ড্রাগন ফলের জেলি, শর্ষের সস, ত্রিফলা, পেঁপে ও মাংসের আচার। আছে জাম্বুরার জেলি, দইয়ের পাউডার, বাদামের ক্রিম, ভাতের চিপস, ডাবের পুডিং। হরেক রকমের পিঠাপুলি, পায়েস–সন্দেশের সঙ্গে আছে মিষ্টান্ন। উৎসুক ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকের হইহুল্লোড়। কেউ কেউ এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরির পদ্ধতিও শুনছেন আগ্রহ ভরে, কিনছেনও সমানতালে।
আজ রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এ প্রদর্শনী হয়েছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১০ তলা ভবনের নিচতলায়। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্ভাবিত নতুন ও নিরাপদ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চার দিনব্যাপী শোভাযাত্রা, খাদ্য সচেতনতা–বিষয়ক লিফলেট বিতরণ, নিরাপদ খাদ্য প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করেছে। আজ ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন।
বেলা ১১টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হাসান ফুয়াদ এলতাজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার এম জাহাঙ্গীর কবির, প্রক্টর শামসুজ্জোহা, খাদ্য দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মারুফ আহমেদ, কমিটির সদস্যসচিব সাজ্জাত হোসেন, জনসংযোগ দপ্তরের কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ।
আয়োজকেরা জানান, কালো জামের জুস, আদার তৈরি বিস্কুট, আমড়া, পটোল, বেগুনের আচার, দারুচিনি পানীয়, আনারসের জ্যাম, পেঁপের আচারসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি দিয়ে প্রস্তুতকৃত অর্ধশতাধিক সৃজনশীল খাদ্যসামগ্রী প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করে এসব নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যসামগ্রী তৈরি করেছেন। এসব খাদ্যসামগ্রীর দাম রাখা হয়েছে ২০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
উৎসব প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ভবনের প্রবেশমুখের দুই পাশে ১৫টি স্টলে এসব খাদ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন গবেষকেরা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তারা আসছেন, দেখছেন। কেউ কেউ চেখে দেখছেন এবং কিনছেনও।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী রিজওয়ানুল হক বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রদর্শনী হয়ে আসছে। খাবারের বিষয়ে মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি ভিন্ন স্বাদের খাবার উপহার দেওয়া সত্যিই একটি অসাধারণ আয়োজন।’
এবারের সবচেয়ে বেশি আচার তৈরি করেছেন ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাইসা আক্তার ও ফজলুল করিম। রাইসা আক্তার বলেন, ‘মানুষ স্বভাবতই ভোজনরসিক। আমরা পড়াশোনার ফাঁকে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গবেষণা করে আসছি। এই কয়েক দিন অনেক পরিশ্রম হয়েছে। কিন্তু নিজের তৈরি করা একটি খাদ্যসামগ্রী মানুষের মাঝে ফর্মুলাসহ পৌঁছাতে পারছি। এতে ভীষণ আনন্দও হচ্ছে।’
ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মারুফ আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ফ্রেশ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে যে কাঁচামাল দরকার হয়, তা দিনাজপুরের আশপাশেই পাওয়া যায়। এ কারণে এখানে এই শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে। নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান নিয়ে আমাদের অনেক সংকটও রয়েছে। তবে বর্তমানে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা এগিয়ে আসছে। এটি দেশ ও জাতির জন্য ভালো খবর। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটি বার্তা দিতে চাই, সেটি হলো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে খাবার তৈরি করলে ছোট ছোট উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে। আমরা নিজেরাও এসব খাদ্যসামগ্রী বাজারজাত করার বিষয়ে আলোচনা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হাসান ফুয়াদ এলতাজ বলেন, বর্তমান সময়ে ভেজাল খাবারের কথা হরহামেশাই শোনা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মান ও নিরাপত্তার বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। গুণগত কারণে এই পণ্যগুলো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়বে বলে তাঁরা আশাবাদী। এর মাধ্যমে জাতির সেবায় এগিয়ে আসতে চায় তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়।