সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শ্রমিক লীগ নেতার বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত দুই যুবকের মধ্যে ফজলুল হক (৪৫) নামের একজন মারা গেছেন। আজ শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহত ফজলুল হক কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিলপাড়া মহল্লার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছয়টি মামলা ছিল। বিস্ফোরণে আহত অন্য যুবকের নাম জিন্নাহ আলী (৪৫)। তিনি সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সদিয়া চাঁদপুর গ্রামের তাছের আলীর ছেলে।
বেলকুচি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সুবর্ণসাড়া গ্রামে শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে ১৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। মোতালেব এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মণ্ডলের আস্থাভাজন বলে জানা গেছে।
বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর উৎসুক জনতা সেখানে জড়ো হলেও তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এলাকাবাসী দেখেন, ঘটনার পরপরই কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে দুজন পুরুষকে আহত অবস্থায় সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিদের ধারণা, বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে বিস্ফোরণের ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। শ্রমিক লীগ নেতার ভাষ্য, রান্নার সময় প্রেশার কুকারের বিস্ফোরণ হয়।
নিহত ফজলুল হকের বড় ভাই মজনু বলেন, তাঁর ছোট ভাই ফজলুল হক দীর্ঘদিন ধরে রাজবাড়ীতে থাকতেন। পাঁচ মাস আগে একটি মামলায় সিরাজগঞ্জে গ্রেপ্তার হলে পুলিশ তাঁকে বাড়িতে আনে। গত বুধবার হঠাৎ জানতে পারেন, ফজলুল হক বোমা হামলায় আহত হয়েছেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, মোতালেব নামের আওয়ামী লীগের এক নেতা বোমা বানানোর জন্য তাঁর ভাইকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ হলে আহত হন। মোতালেব পুরো এক দিন ফজলুলকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। পরে তাঁর চিৎকার সইতে না পেরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করেন। আজ ভোরে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে মোতালেব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নৌকার সমর্থক। প্রচারে ছুটে বেড়াচ্ছি। মঙ্গলবার দুপুরে রান্নার সময় বাড়িতে ব্যবহৃত প্রেশার কুকারটি হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়।’ তাঁর দাবি, এ ঘটনাকে রং চড়িয়ে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে এ ব্যাপারে আজ মোতালেবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সুবর্ণসাড়া গ্রামে তদন্ত করেছেন। তবে কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি তাঁরা। বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় আহত একজন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বলে শুনেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গেলে মোতালেবের স্ত্রী-স্বজনেরা জানান, রান্নার সময় প্রেশার কুকার বিস্ফোরিত হয়। তবে কোনো আলামত দেখাতে পারেননি। বোমাজাতীয় বস্তু বিস্ফোরণের আলামত মেলেনি। যে কালো মাইক্রোবাসের কথা বলা হচ্ছে, সেটি এক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়ি। সেটিতে তল্লাশি করেও আলামত পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ শব্দের বিষয়টি নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। এ নিয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে।