বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় পোশাক তৈরির একটি কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকেরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এ সময় পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আহত শ্রমিকেরা হলেন শরিফুল ইসলাম, শারমিন আক্তার, আবু সাইদ, আসমা বেগম, সবুর হোসেন, নাসরিন আক্তার, আশিক হোসেন, সেলিনা বেগম, হালিমা বেগম ও মোশারফ হোসেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মৌচাক এলাকার নিট লাইন ক্লোথিংস লিমিটেড নামের ওই কারখানার শ্রমিকেরা ওই আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কারখানাটির শ্রমিকদের তিন মাসের ও স্টাফদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিক বেতনের আশ্বাস দেওয়ার পরও বেতন না দিয়ে নানাভাবে টালবাহানা করছেন। বেতন না দিয়ে মাঝেমধ্যেই কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ রাখছে। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে গিয়ে দেখেন কারখানা আবারও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কারখানার সামনে লেখা রয়েছে, ‘আমাদের কারখানায় বর্তমানে পর্যাপ্ত কাজ না থাকায় এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আগামী ১ জানুয়ারি ২০২৩ কারখানা খোলা হবে।’ আরও লেখা আছে, ‘শ্রমিক, কর্মচারীদের বেতন–ভাতা বিধি মোতাবেক খোলার দিন পরিশোধ করা হবে। সকলকে ওই দিন যথাসময়ে কাজে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। সাময়িক আসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।’
বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানার সামনে ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান করে অবরোধ সৃষ্টি করেন। মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা–পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে পুলিশও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ধাওয়া খেয়ে শ্রমিকেরা সরে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
কারখানার অপারেটর লতিফ হোসেন বলেন, ‘আমরা তিন মাসের বেতন পাব। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন না দিয়ে নানাভাবে টালবাহানা করছে। বেতন না পাওয়ায় ঘরভাড়া দোকান বাকি দিতে পারছি না। মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।’ সুইং সেকশনের শ্রমিক আলেয়া খাতুন বলেন, ‘প্রতি মাসে কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে আজ বেতন দেব, কালকে বেতন দেব। এভাবে প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে, তবু বেতন দিচ্ছে না। যার কারণে বাধ্য হয়েই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।’
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরে যেতে বললে তাঁরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে ইটপাটকল ছুড়তে থাকে। যার কারণে পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ করেছে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বেতনের বিষয়ে মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মালিক দেশের বাইরে আছেন। ফিরে এসে ৩০ ডিসেম্বর বেতন পরিশোধ করে দেবেন বলে জানানো হয়েছে।