পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নে পুরোনো দুধকুমার নদের ওপর সেতুটি সাত বছর আগে ভেঙে গেছে। কিন্তু এত দিনেও সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে উপজেলা শহরের সঙ্গে সেতুর ওপারের পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। উপজেলা ও জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে তাঁরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে ২ কোটি ২৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৫ টাকা চুক্তিমূল্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালে সেতুর কাজ শেষ হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় প্রবল স্রোতে সেতুর নিচে মাটি সরে যায় এবং এটি হেলে পড়ে। একই সঙ্গে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ওই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কালিগঞ্জ ইউনিয়নের কুমেদপুর নামাপাড়ায় গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা মাটি সরে গিয়ে সেতু হেলে পড়েছে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। সেতুর ভাটিতে নদের বুকে জেগে ওঠা সমতল চরের ফসলি জমির ভেতর দিয়ে মানুষ ও যাত্রীবোঝাই ব্যাটারিচালিত রিকশা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় কুমেদপুর বাজার থেকে ঢেপঢেপি বাজার পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পাকা সড়কটিও বেহাল। সেতু নির্মাণ ও সড়ক সংস্কার না হওয়ায় এসব এলাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০১০ সালে কুমেদপুর থেকে ঢেপঢেপি বাজার এলাকায় প্রায় চার কিলোমিটার নতুন পাকা সড়ক হয়। এ সময় সড়কের উজানে দুধকুমার নদের একটি পুরোনো শাখার পানি প্রবাহের জন্য কুমেদপুর নামাপাড়ায় ছোট ছোট দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ওই সময়ে সড়কের উজানের পানির স্রোতের সম্পর্কে সওজ চিন্তা করেনি। ওই চার কিলোমিটার সড়কে মাত্র দুটি ছোট সেতু (কালভার্ট) নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যার সময় উজানের অতিরিক্ত পানির স্রোতে সড়কের পাঁচটি স্থান ভেঙে যায়। সেতু দুটির নিচের মাটি সরে গিয়ে দেবে যায়। পরে সেতু একদিকে হেলে পড়ে এবং দুই দিকের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কুমেদপুর নামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মোত্তালেব (৬০) বলেন, ‘সেতু ভেঙে পড়ার সাত বছর হয়ে গেল। বিভিন্ন সময়ে খালি লোকজন আইসে আর ছবি তোলে, মাপজোখ করে। সেতু নির্মাণ হয় না। শুকনো মৌসুমে ভাঙা রাস্তা ও বালুচর দিয়ে রিকশায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ছোট ছেলে-মেয়ে ও অসুস্থ মানুষকে নিয়ে বিপদের শেষ থাকে না। সেতু নির্মাণ করা হলে নদী ওপারের পাঁচ ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াত সহজ হবে।’
মাদারগঞ্জ থেকে ঢেপঢেপি বাজার ও দুধকুমার নদের ঘাটপাড় এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান আমিনুল ইসলাম (৩২)। তিনি জানান, সেতু ভাঙার আগে মাদারগঞ্জ ও কচাকাটা থানা থেকে দুধকুমার নদের ঘাটে আসতে ৩০ মিনিট সময় লাগত। আর এখন মাদারগঞ্জ থেকে দুধকুমার ঘাটপাড়ে আসতেই সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। আবাদি জমির আইল, উঁচু-নিচু ভাঙা রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। একটু এদিক–সেদিক হলেই গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয় থাকে। যাত্রীদের ভাড়াও দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে।
সওজের কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১০ সালে দুধকুমার নদের পুরোনো প্রবাহে সেতু নির্মাণ করার সময় পরিকল্পনায় কিছু ভুল ছিল। ফলে ২০১৭ সালের বন্যায় ওই রাস্তার কয়েকটি জায়গা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেতুটির নিচের মাটি সরে গিয়ে দেবে যায়। পরে আমরা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে ওই সেতু এলাকায় হাইড্রো-মরফোলজি স্টাডি করে নতুন করে খসড়া নকশা করেছি। কুমেদপুর নামাপাড়া এলাকায় ২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা বাজেট ধরে ১০৩ মিটার একটি এবং ঢেবঢেবি বাজারের কাছে আরও একটি ৯৪ মিটার সেতু নির্মাণের জন্য খসড়া করা হয়েছে। দুধকুমার নদে ৭০০ মিটার সেতুর প্রস্তাব রয়েছে। সেটির অনুমোদন পাওয়া গেলে তবেই এই সংযোগ সড়কের সেতু দুটির দরপত্র আহ্বান করা হবে।’