বগুড়া শহরে শত বছরের পুরোনো বাদুরতলা আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল ও বিক্রিচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা জাল কাগজপত্র তৈরি করে মাঠটি দখল ও বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে এ অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল ও বিক্রির পাঁয়তারার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সমাবেশে টিনপট্টি নারায়ণ বিগ্রহ মন্দিরের সভাপতি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক চপল সাহা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, এলাকাবাসী রিয়াজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে এলাকার ছাত্র-শিক্ষক, ক্রীড়াপ্রেমী, মন্দির কমিটিসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫২ সালে বগুড়া আইডিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়সংলগ্ন ১২ শতক জায়গা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নারায়ণ বিগ্রহ মন্দিরের মালিকানাধীন জায়গাটি মন্দির কমিটি কখনোই খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারে বাধা দেয়নি।
টিনপট্টি নারায়ণ বিগ্রহ মন্দিরের সভাপতি চপল সাহা অভিযোগ করে বলেন, কতিপয় ভূমিদস্যু মন্দির কমিটিতে ঢুকে খেলার মাঠটি বিক্রির চেষ্টা চালিয়েছিল। তখন খেলার মাঠ রক্ষা কমিটির হস্তক্ষেপে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওই চক্রটি আবার খেলার মাঠটি বিক্রির তৎপরতা শুরু করেছে। তিনি বলেন, শহরে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। বাদুরতলা মহল্লায় মাঠটিতে শিশু-কিশোরেরা সারা বছর খেলাধুলা করে। শত বছরের পুরোনো এ মাঠে তাঁরা খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন। বর্তমানে নতুন প্রজন্ম সেখানে খেলাধুলা করছে। যেকোনো মূল্যে শত বছরের খেলার মাঠ রক্ষা করবেন এলাকাবাসী।
খেলার মাঠ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি বিক্রি করা আইনসিদ্ধ নয়। অথচ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার ছত্রচ্ছায়ায় মন্দির কমিটিকে ব্যবহার করে শত বছরের মাঠটি বিক্রির পাঁয়তারা চলছে।
জানতে চাইলে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনেও আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি রাজনীতির সূতিকাগার। ঐতিহ্যবাহী ওই মাঠ ঘিরে তাঁদের অনেক স্মৃতি আছে। কে কোন দল করেন, কার রাজনৈতিক পরিচয় কী সেটা বড় কথা নয়। মাঠটি কাউকে দখল বা বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। বগুড়ার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শত বছরের এ খেলার মাঠ রক্ষা করা হবে।