ভারতের উপহারের ২০টি রেলের ইঞ্জিন দর্শনা থেকে সৈয়দপুরের পথে

ভারত থেকে উপহার পাওয়া রেলের ইঞ্জিন। বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলস্টেশনে
 ছবি: প্রথম আলো

ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া রেলের পুরোনো ২০টি ব্রডগেজ ডিজেলচালিত ইঞ্জিন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে চারটি ইঞ্জিন সৈয়দপুরে পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৬টি ইঞ্জিন পর্যায়ক্রমে সুবিধাজনক সময়ে পাঠানো হবে। তবে কত দিনে তা দর্শনা থেকে সৈয়দপুর পৌঁছাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউই তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মির্জা কামরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণের পর আজ সকালে চারটি ইঞ্জিন যাত্রীবাহী কোচের সঙ্গে সংযুক্ত করে চার দফায় পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলো সুবিধাজনক সময়ে পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে একটি একটি করে ‘ডেড ইঞ্জিন’ হিসেবে বা ‘ইঞ্জিন বন্ধ’ অবস্থায় পাঠানো হবে। সেখানে কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশের অভ্যন্তরীণ পথে চলাচল করবে।

আজ সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়, দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের উত্তর প্রান্তে লুপ লাইনে এক সারিতে ১৬টি ইঞ্জিন সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। প্রথমটির সামনে ইংরেজিতে লেখা ‘হ্যান্ডিং ওভার সিরিমনি, ব্রডগেজ ডিজেল লোকোমোটিভ, ফ্রম ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ টু বাংলাদেশ রেলওয়েজ’। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর দুজন এবং নিরস্ত্র আনসার বাহিনীর তিন সদস্যকে দেখা যায়। এ সময় উৎসুক মানুষ দূর থেকেই উপহারের রেলের ইঞ্জিন দেখতে থাকেন। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। বুধবার বিকেল পাঁচটায় এ খবর লেখার সময় ১৬টি ইঞ্জিন লুপ লাইনে ছিল।

গতকাল বিকেলে ঢাকায় রেলভবন থেকে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব নয়াদিল্লি থেকে ভার্চ্যুয়ালি এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গেদে সীমান্তপথে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে উপস্থিত থেকে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করেন। রেলওয়ে বোর্ড ইন্ডিয়ার ট্রাফিক পরিদর্শক অশোক কুমার বিশ্বাস পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগের লোকোমোটিভ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী সরেক জামালের কাছে রেলের ইঞ্জিনগুলো বুঝিয়ে দেন।

রেলের ইঞ্জিন গ্রহণকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ভারতীয় রেলওয়ে থেকে ২০টি ইঞ্জিন অনুদান হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিনা পয়সায় আট বছরের পুরোনো ২০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ উপহার দিয়েছে ভারত। এসব ইঞ্জিন বাংলাদেশের রেলের বহরে যুক্ত হবে।

ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে ২০টি ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আধুনিক ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন; যা বাংলাদেশের মানুষের রেল ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্য আনবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ১ জুন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের রেলমন্ত্রীর এক বৈঠকে ২০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন বাংলাদেশকে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে ২০টি ইঞ্জিনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০টি রেল ইঞ্জিন উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে ভারত।