শেরপুরগামী বাসটিতে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে উঠেছিলেন মো. রিপন (৩৫)। সঙ্গে ছিল ১১ বছরের ছেলে মো. রিমন ও খালা বুলবুলি বেগম (৪৮)। জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই যায় বাসটি। জয়দেবপুর পার হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক গতিতে চলছিল বাস। বাজছিল উচ্চ স্বরে গান। যাত্রীরা বারবার চালককে ধীরে চালানোর কথা বললেও চালক অনুরোধ মানেননি।
ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা বাইপাস এলাকায় এসে বাসের নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। সড়ক বিভাজকে উঠে ধাক্কা লাগে বিলবোর্ডের পিলারের সঙ্গে। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে–মুচড়ে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৩৩ জন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি, যাঁদের মধ্যে আছেন রিপন মিয়া, তাঁর ছেলে রিমন ও খালা বুলবুলি বেগমও। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রিপনদের বাড়ি জামালপুরের সদর উপজেলার পাথালিয়া বকুলতলা গ্রামে। আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো. রিপন বলেন, ফাইয়াজ পরিবহন নামের বাসটি যখন হেলেদুলে চলছিল, তখন তিনি কিছুটা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। একপর্যায়ে বাসটি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খালা বুলবুলি বেগম ওই সময় ভয় পেয়ে তাঁকে ডেকে তোলেন। ঠিক তখনই বিকট শব্দ হয়। এরপর আর কিছু মনে নেই। কিছুক্ষণ পর ছেলে ও খালাকে তিনি নিজেই বাসের জানালা দিয়ে বের করেন। হয়তো বাসের পেছনে বসার কারণে তাঁরা বেঁচে গেছেন।
আজ সকাল আটটা পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। লাশগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে রাখা হয়েছে। সকালে সেখানে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের কোনো স্বজনকে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ৩৩ জন ভর্তি। বাসচালকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চিকিৎসাধীন বুলবুলি বেগম বলেন, ‘জয়দেবপুর চৌরাস্তা পার হওয়ার পর থেকেই বাসটি বেপরোয়া গতির কারণে হেলেদুলে চলছিল। আমরা (যাত্রীরা) চালককে বারবার আস্তে চালানোর জন্য বলি। কিন্তু চালক কারও কথা শোনেননি। চালক কথা না শোনায় একবার বাস থেকে নেমে যাওয়ার কথাও ভেবেছি। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়া নামা হয়নি।’
আহত রোগীর স্বজন মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমার মামা রুহুল আমিন এ বাসের যাত্রী ছিলেন। মামা চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও তিনি কথা বলতে পারছেন। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার আগে বাসটি ব্যাপক গতিতে চলছিল। তখন বাসের আলো নেভানো ছিল এবং গান বাজানো হচ্ছিল। যাত্রীরা ভয়ে বারবার চালককে আস্তে চালাতে বললেও চালক কোনো কথা শোনেননি।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাসটি ঢাকা থেকে শেরপুর যাচ্ছিল। হতাহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।