জামায়াতে ইসলামী
জামায়াতে ইসলামী

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

যশোরে প্রার্থী চূড়ান্ত করে মাঠে নেমেছে জামায়াত

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে আবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলীয় প্রতীক না থাকায় স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে যশোরের আটটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইতিমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার, লিফলেট ও গণসংযোগের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যশোরে দীর্ঘদিন জামায়াতের প্রকাশ্য কোনো তৎপরতা ছিল না। এক যুগে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি ঝটিকা মিছিল ছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচিও দেখা যায়নি। দলীয় কার্যালয়গুলো দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটি এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে সংগঠিতভাবে প্রকাশ্যে আসতে চাইছে।

জেলা জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, আটটি উপজেলার মধ্যে সদরে চেয়ারম্যান পদে জেলা জামায়াতে ইসলামী শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবুল হাসিম রেজা ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে সহকারী সেক্রেটারি শামছুজ্জামানকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যান পদে শার্শায় তবিবর রহমান জাহাঙ্গীর, ঝিকরগাছায় জয়নাল আবেদীন, চৌগাছায় গোলাম মোর্শেদ, মনিরামপুরে ফজলুর রহমান, বাঘারপাড়ায় গোলাম রসুল, অভয়নগরে মশিউর রহমান ও কেশবপুরে আবদুস সামাদকে চূড়ান্ত করেছে দলটি। গোলাম মোর্শেদ চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির। অন্যরা জেলা কর্ম পরিষদের সদস্য।

কয়েকটি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদেও প্রার্থিতা চূড়ান্তের খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থীদের সবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দলের ভেতরও সংশয় রয়েছে।

আটটি উপজেলায় প্রার্থী চূড়ান্ত করার তথ্য নিশ্চিত করে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মো. শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা নেই। তবে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে করতে পারবে। এতে দলের সম্মতি থাকবে। রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতির কারণে অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন করতে রাজি হচ্ছেন না। অনেকে শেষ পর্যন্ত হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় থাকা নেতারা। কেশবপুর উপজেলায় জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি প্রচারপত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে। অবশ্য সেই পোস্টারে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করা হয়নি। অন্য উপজেলায় পোস্টার সাঁটানো বা প্রচারপত্র বিলির খবর পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামগঞ্জ-হাটবাজারে সামাজিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচনী ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

চৌগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও জেলার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন মৃত ব্যক্তির জানাজা, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করছি। সেখানে আমাদের নির্বাচনের একধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রকাশ্যে নির্বাচনের প্রচারণা আমাদের জন্য কঠিন।’

জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত করায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একটা ধাক্কা লেগেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও জেলা পর্যায়ে নেতারা নির্বাচনী কৌশল নিয়ে নতুভভাবে ভাবছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াত প্রার্থী দিলে আমাদেরও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও জেলা পর্যায়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করে একটা গাইডলাইন দেওয়া হবে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচন করলেও তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। তাঁরা ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় আট উপজেলায় অন্তত ৩০ নেতা–কর্মী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রচারে রয়েছেন অন্তত ৫০ নেতা–কর্মী।

জামায়াতের কয়েকজন নেতা জানান, ২০১১ সালের পর রাজনৈতিকভাবে অনেকটা অন্তরালে গেলেও নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় ছিলেন না। দলকে সংগঠিত রাখতে গোপনে তৎপরতা ছিল। ২০১৪ সালে যশোরে কিছুটা প্রকাশ্যে কর্মসূচি করলেও পরে সেটিও বন্ধ রাখা হয়। এবার উপজেলা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সামনে রেখে দলটি কিছুটা ছাড় পাচ্ছে বলে মনে করছেন শীর্ষনেতারা। এই সুযোগে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে জামায়াত।

এদিকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবেন না জেলা বিএনপির নেতারা। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, তারপরেও যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ নির্বাচনে অংশ নেয়; তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।