শঙ্খ নদ থেকে বালু তোলা হচ্ছিল। এ সময় অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন। অভিযান চালানোর পরও বন্ধ হয়নি বালু তোলা। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া এলাকায়
শঙ্খ নদ থেকে বালু তোলা হচ্ছিল। এ সময় অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন। অভিযান চালানোর পরও বন্ধ হয়নি বালু তোলা। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া এলাকায়

চট্টগ্রামের বাঁশখালী

চারবার বসতভিটা সরিয়েছেন, তবু ভাঙনের ভয়ে থাকেন আলী আহমদ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের রাতাখোর্দ গ্রামের বাসিন্দা আলী আহমদ শঙ্খ নদের ভাঙনের কবলে পড়ে চারবার বসতভিটা হারিয়েছেন। এরপরও বসতভিটার হারানোর ভয় করেন তিনি। লাগামহীনভাবে নদ থেকে বালু তোলার কারণে শঙ্খের ভাঙন তীব্রতর হয়েছে।

আলী আহমদ বলেন, ‘শঙ্খ নদের ভাঙনে জীবনে চারবার বসতভিটা স্থানান্তর করতে হয়েছে। এখনো ভয়ে আছি, কখন ভিটা ভেঙে যায়। প্রবল জোয়ারের পাশাপাশি নদ থেকে বালু তোলায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শঙ্খ নদ থেকে এভাবে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি ইউনিয়ন। প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে বালু তোলা বন্ধ হলেও বিরতি দিয়ে আবারও বালু তোলায় ভাঙনের ঝুঁকি থেকে যায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া থেকে খানখানাবাদ ইউনিয়নের প্রেমাশিয়া পর্যন্ত এলাকায় ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়। দিনের বেলা কম হলেও রাতের বালু তোলায় এসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও বালু তোলা বন্ধ হয়নি। ফলে নদের ভাঙন কমেনি।

উপজেলা প্রশাসন জানায়, সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় পুকুরিয়া ইউনিয়নের তেচ্ছিপাড়া এলাকায় অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন। ওই সময় তিনি বালু উত্তোলনকাজে ব্যবহৃত ড্রেজার জব্দের পাশাপাশি বালু উত্তোলনের দায়ে মো. ইলিয়াছ (৫৫), মো. জসিম (৪৫) ও মো. রাকিবকে (২১) এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পর বুধবার কোথাও ড্রেজার নামানো হয়নি। তবে সুযোগ বুঝে আবারও বালু তোলার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় লোকজন। পুরো এলাকায় বালু তোলা বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার দাবি তাঁদের।

খানখানাবাদ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব লোকমান হাকিম বলেন, অভিযানের পর বন্ধ থাকলেও এত দিন খানখানাবাদ এলাকায় চারটি ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভাঙনের কবল থেকে পুরো ইউনিয়নকে রক্ষা করতে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি করেন তিনি।

পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন বলেন, বালু তোলার কারণে তেচ্ছিপাড়া এলাকায় ভাঙন বেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বালু তোলা বন্ধ হলে এলাকা রক্ষা পাবে। তাই নিয়মিত অভিযান চালানো দরকার।

আসহাব উদ্দিন আরও বলেন, ‘মঙ্গলবারের অভিযানের পর ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার খবর পাইনি।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন বলেন, শঙ্খ নদে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। যেখান থেকে বালু তোলার অভিযোগ আছে সব জায়গায় অভিযান করা হবে।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, মঙ্গলবার নদ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় তিনজনকে আটক করা হয় এবং বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০, সংশোধিত ২০২৩ অনুযায়ী তাঁদের এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই সময় বালুপূর্ণ ড্রেজারটিও জব্দ করা হয়েছে।