কুয়াশাচ্ছন্ন চারদিক। রাতভর টিপ টিপ বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। সেই পথে তীব্র শীতে কাঁপতে কাঁপতে ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালাচ্ছিলেন লুঙ্গি, জ্যাকেট ও মাথায় মাফলার পরা রফিকুল ইসলাম (৪৯)। পঞ্চগড় পৌরসভার জালাসী এলাকায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টা আলাপকালে রফিকুল বললেন, ‘হামার জাড়-শীত নাই বাপু, ভ্যান না চালাইলে ভাত নাই।’
শুধু ভ্যানচালক রফিকুল ইসলামই নন। দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে কাহিল রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সারা রাইত শিলশিল করে ঠান্ডা বাতাস বহচে, আর কুয়াশাতে কিছু দেখা যায় না। সকালে জাড়ের (ঠান্ডার) তানে (জন্য) ভ্যান নিয়া তাড়াতাড়ি বাইর হবা পারু না। কয় দিন থেকে যে জাড় আইচ্চে (আসছে), জাড়োতে হাত-পাওলা ককড়া হয়ে আসেচে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তা সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নয়। আজ সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালে। সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। তবে বেলা ১১টার দিকে সূর্যের দেখা দেওয়ায় মিষ্টি রোদে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।
এর আগে ২ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পঞ্চগড়ে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। এ সময় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করেছে। তবে প্রায় প্রতিদিনই সকালে রোদের দেখা মিলেছিল। ৮ জানুয়ারি হঠাৎ করেই তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যায়। ৯ জানুয়ারি থেকে থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা পাঁচ দিন ধরে উত্তরের এই জনপদে দেখা মেলেনি সূর্যের।
টানা কয়েক দিনের কনকনে শীতে পঞ্চগড়ে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়াতে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার কৃষিশ্রমিক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন তকা (থেকে) জাড়োতে কাম-কাজ ঠিকমতো করা যায় না। সকালে কাজোত গেলে হাত-পা অবশ হয় যাছে। আজি একটু রোদ দেখা যাছে। আইজ দিনডা বোধে (মনে হয়) ভালোয় যাবে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিনের তুলনায় আজ তেঁতুলিয়ার আকাশে মেঘের পরিমাণ কমেছে। আজ বেলা ১১টার মধ্যে কুয়াশা কেটে গিয়ে সূর্য উঠেছে। হালকা বাতাস থাকলেও ঝলমলে রোদে দিনভর কম শীত কম অনুভূত হবে। তবে এ মাসের শেষের দিকে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।