কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ারের (তণু) সমর্থক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাহাতাবুল হক ওরফে জয় হুমকি দিয়ে বলেছেন, কেউ ভোট চুরি করলে তাঁর হাত কেটে নেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার রাতে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, চক রাজাপুর ও মান্নানখালী এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এক নির্বাচনী সভায় তিনি প্রশাসনের উদ্দেশে এ হুমকি দেন। সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার উপস্থিত ছিলেন।
সভায় খন্দকার মাহাতাবুল হক বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন যদি কেউ থাকেন বলে দিয়ে যাই, ভোট চুরি করতে যাবেন না। ভোট চুরি করলে আপনাদের হাত কেটে নেওয়া হবে।’ মাহাতাবুল হকের ওই বক্তব্যের সাড়ে তিন মিনিটের একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মাহাতাবুল হক। কিন্তু দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে আবারও মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। হানিফ মনোনয়ন পেলে তিনি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। পরে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ছেলে পারভেজ আনোয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাঁর পক্ষে প্রচারণায় নামেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মাহাতাবুল হককে বলতে শোনা যায়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মের অহংকার তণুকে স্বতন্ত্র সমর্থন দিয়েছেন। কুষ্টিয়া সদর আসনে আওয়ামী লীগের মার্কা দুইটা। একটা হচ্ছে ঈগল, আরেকটা নৌকা। নৌকা হচ্ছে আমাদের নবী হজরত নুহ (আ.)–এর নৌকা ছিল। এই নৌকাটাকে হানিফের মতো লোক, আতার (হানিফের চাচাতো ভাই) মতো লোক অপবিত্র বানিয়ে দিয়েছে। এই নৌকাটাকে পবিত্র বানানোর জন্য নতুন প্রজন্মের অহংকার পারভেজ আনোয়ার তণুকে আমরা দায়িত্ব দেব। এই নৌকাটা পবিত্র করে তাঁকে আমরা নৌকায় বসিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে যাব। আগামী দিনে আপনারা প্রস্তুত থাকবেন।’
ভোটারদের উদ্দেশে মাহাতাবুল হক বলেন, ‘আপনারা ভয় করবেন না ভাই। ভয় করার সময় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলেছেন, আমি নৌকা দিলাম একটা, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলাম একটা। তোমরা যদি ভালো কাজ করো তোমাদের ভোট দেবে। তোমরা যদি খারাপ কাজ করো, তোমাদের ভোট দেবে না। এই সদর আসনে এরা তো ভালো কাজ করেনি ভাই। টেন্ডারবাজি, চোর, ডাকাত, চরিত্রহীন সমস্ত খারাপ লোককে নিয়ে তারা রাজনীতি করেছে। আমার বাবা আওয়ামী লীগ করে, তণুর বাবা আওয়ামী লীগ ছিল পুরোনো, তাঁদের মূল্যায়ন নেই। এই মূল্যায়ন যদি করতে হয়, তাহলে আমাদের ঈগল মার্কায় ভোট দিতে হবে।’
মাহাতাবুল হক আরও বলেন, ‘এখানে প্রশাসনের লোকজন কেউ যদি থাকেন বলে দিয়ে যাই, ভোট চুরি করতে যাবেন না। ভোট চুরি করলে আপনাদের হাত কেটে নেওয়া হবে। সেই হাত কেটে...ঝুলানো হবে।’ তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আপনারা ভোট চুরি করার চিন্তা কইরেন না। কারণ, ঘরে বসে দুইবার এমপি হয়েছেন তো, পয়সা খরচ করেন নাই। এখন তো বেশ পয়সা ভালোই খরচ করছেন। পয়সা তো আপনি দেন না। পয়সা তো দুর্নীতি করছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করছেন, সেই টাকা দিয়ে নির্বাচন করছেন।’
ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে খন্দকার মাহাতাবুল হককে ফোন করলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, গতকাল সন্ধ্যায় ঈগল প্রতীকের একটি সভায় তিনি ওই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এখন ফরিদপুরে আছেন, ফিরে দেখা করে এ ব্যাপারে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। ভিডিওটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।