ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবার সামনে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের ট্রফি ভেঙে ফেলেছেন বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরুবা ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ইউএনওকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। ট্রফি ভাঙার প্রতিবাদে ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়ে আলীকদমে আজ শনিবার বিক্ষোভ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আবাসিক যুব স্বাধীন সমাজ ক্লাব। গতকাল ছিল ফাইনাল খেলা। এতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণের আগে তিনি বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আপনারা যত দিন পর্যন্ত সহনশীল না হতে পারবেন, তত দিন ট্রফিগুলো আমানত হিসেবে থাকবে। আরেকটি ম্যাচ হলে তারপর দেব।’
ইউএনওর বক্তব্যের জবাবে উপস্থিত সবাই ‘না না’ বলতে থাকেন। এরপর ‘যদি ট্রফি না থাকত, আমরা খেলতাম না? ...আমি ট্রফিটা ভেঙে এখন খেলা শুরু করব’ বলেই ট্রফি দুটি আছড়ে ভেঙে ফেলেন তিনি।
টুর্নামেন্টের আয়োজক আবাসিক যুব স্বাধীন সমাজ ক্লাবের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফাইনাল খেলায় আবাসিক জুনিয়র একাদশ বনাম রেফারফাড়ি বাজার একাদশের খেলা ড্র হয়েছিল। পরে টাইব্রেকারে আবাসিক জুনিয়র একাদশ বিজয়ী হয়। কিন্তু রেফারফাড়ি বাজার একাদশ এতে আপত্তি জানায়। পরে রেফারি, খেলোয়াড়সহ সবাই মিলে বিষয়টির মীমাংসা করেন। আর কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ট্রফি বিতরণের সময় প্রধান অতিথি এভাবে ট্রফি ভেঙে ফেলবেন, সেটি তাঁরা কল্পনাও করেননি।
চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন বলেন, খেলায় বিজয়ী দল ঘোষণার সময় দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্ক হয়েছিল। ইউএনও মনে করেছিলেন, ট্রফি বিতরণ করলে দুই পক্ষের অসন্তোষ থেকে যাবে। এ জন্য বিতরণ না করে ভেঙে ফেলেছেন।
আলীকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম তাঁর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ইউএনও মেহরুবা ইসলাম আলীকদমের জনগণকে অসম্মান করেছেন। তাঁকে আলীকদম থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বেলা তিনটার দিকে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আবুল কালাম।
এ বিষয়ে কথা বলতে মেহরুবা ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। এ রকম আচরণ করার কথা নয়। বিতর্ক থাকলে ট্রফি না ভেঙে নিজের হেফাজতে রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারতেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।