১১ দফা দাবিতে রাজশাহী আইএইচটির প্রশাসন ভবন অবরোধ শিক্ষার্থীদের

রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে নগরের লক্ষ্মীপুর টিবিপুকুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নির্ধারিত ক্লাস রুটিন, ল্যাবে যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা, ছাত্রীদের কমনরুমসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার সকাল আটটায় তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং ওই ভবনের গেটের তালা খুলতে বাধা দেন। পরে দাবি মানার আশ্বাস পেয়ে বেলা সোয়া দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন এবং প্রশাসন ভবনের তালা খোলা হয়।

এদিকে আন্দোলন চলাকালে দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর টিবিপুকুর এলাকায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) অবস্থান। এটি আগে প্যারামেডিকেল নামে পরিচিত ছিল। ১১ দফা দাবিতে সকাল আটটায় ওই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানান, এই প্রতিষ্ঠানে সাতটি বিভাগে প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজির শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করেন। কিন্তু ল্যাবে তেমন যন্ত্রপাতি নেই। এক্স-রেসহ কিছু যন্ত্রপাতি থাকলেও তা রাখার জায়গা নেই। ফলে এসব ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান না। এক ঘণ্টা পর পর ক্লাস হয়। ঝোপঝাড়ে ভরা এই ক্যাম্পাসে এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা কোথায় বসবেন সে জায়গা নেই। মেয়েদের কমন রুমও নেই। নেই আলাদা শৌচাগার। ফলে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ শিক্ষকেরা কখন আসেন কখন এবং যান তার কোনো ঠিক নেই। ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগে থেকে কোনো রুটিন দেওয়া হয় না। আগের রাতে মেসেঞ্জার গ্রুপে ক্লাসের সময় জানান শিক্ষক। তিনি তাঁর সময়মতো ক্লাস নেন।

আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রেডিওলজি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রুবাইদা তন্দ্রা ও ডেন্টাল বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বীথি খাতুন। এ সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরে বেলা দুইটার দিকে শিক্ষার্থীদের এসব দাবি নিয়ে আইএইচটির অধ্যক্ষ ফারহানা হকের সঙ্গে বসেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবীন। এ সময় আইএইচটি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাঁরা অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন।

ওই বৈঠকের পর কর্মচারীদের একটি শৌচাগারকে শুধু ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। পড়ে থাকা একটি কক্ষকে মেয়েদের কমন রুম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আগেই ক্লাস রুটিন দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানানো হয়। এ সময় অধ্যক্ষ ফারহানা হক জানান, প্রশাসনিক বিষয়গুলো তিনি দেখে দ্রুতই সমাধান করবেন। আর অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন দরকার, সে জন্য রাজশাহীর জনপ্রতিনিধি এবং গণপূর্তের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। অধ্যক্ষের এসব আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।

আইএইচটির ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরায়েল হোসেন বলেন, ‘আমরা মোট ১১টি দাবি জানিয়েছি। কয়েকটা ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। বাকিগুলো পূরণের ব্যাপারে অধ্যক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করব। এরপর সব দাবি পূরণ না হলে আবার আন্দোলন করব।’

অধ্যক্ষ ফারহানা হক বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এসেছিলেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের নেগোসিয়েশন হয়ে গেছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।’

শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ছাত্র হোস্টেল খুলে দিতে হবে। পরীক্ষার হলে দেখে নেওয়ার হুমকি এবং ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া বন্ধ করিতে হবে। মেধাতালিকার মাধ্যমে নিজ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভাগীয় ল্যাব এবং সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি থাকতে হবে। নির্দিষ্ট একটি ক্লাস রুটিন করতে হবে এবং সেই রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিতে হবে। মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবেশবান্ধব ওয়াশরুম এবং কলেজ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মিডটার্ম পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা পাস করতে পারছেন না, তাঁদের জন্য আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা ও সহযোগিতা করতে হবে। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু করতে হবে। মানসম্মত ক্যানটিন তৈরি ও খেলার মাঠ সংস্কার এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত বসার জায়গা থাকতে হবে। প্রশাসন ভবন সংস্কার ও ক্লাস রুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মেয়েদের হোস্টেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে এবং হোস্টেলের চারপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে দিতে হবে।