খামারের গরু বেচে গোখাদ্যের দেনা শোধ

একজন খড় বিক্রেতার দোকানে হালখাতায় বাকি পরিশোধ করছেন এক খামারি। শনিবার বেড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া উপজেলার গোখাদ্যের বাকির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেক খামারি বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো খামারি দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে স্বল্পমূল্যে খামারের দুধ বিক্রির চুক্তি করছেন। সেই টাকা দিয়ে গোখাদ্যের দেনা শোধ করছেন।

খামারিরা জানিয়েছেন, এক বছরের ব্যবধানে গোদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। সেই তুলনায় দুধের দাম বাড়েনি। ফলে কয়েক মাস ধরে লোকসান বেড়ে যাওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বিশেষ করে খড়, খইল, ভুসিসহ বিভিন্ন প্রকারের গোখাদ্যের দোকানে তাঁদের মোটা অঙ্কের টাকা বাকি পড়েছে। গোখাদ্য ব্যবসায়ীসহ পাওনাদারেরা বাকি পরিশোধের জন্য খামারিদের চাপ দিচ্ছেন। পাওনা আদায়ে নিজ নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হালখাতার আয়োজন করছেন গোখাদ্য ব্যবসায়ীরা। এ জন্য খামারের গরু বিক্রি করে তাঁরা হালখাতায় দেনা শোধ করছেন।

বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণ পাড়া মহল্লার খামারি আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোখাদ্যের দাম বাড়ায় গরু পালনে এখন গত বছরের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হতেছে। ফলে খেড় (খড়) ও ভুসির দোকানে ৫০ হাজার টাকার মতো বাকি পড়ছিল। হালখাতায় বাকি শোধ করার জন্যে পালের একটা গরু বেইচ্যা দিছি।’

উপজেলার বেশ কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা হয়ে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো খামারি দেনা শোধের জন্য দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাঁদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গোখাদ্যের ব্যবসায়ী ও অন্য পাওনাদারের ঋণ শোধ করছেন তাঁরা। এ জন্য বাজারদরের চেয়ে কম দামে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে দুধ বেচতে হচ্ছে।

বেড়া বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন খড়ের দোকানের বাকি শোধ করতে হালখাতায় এসেছিলেন পৌর এলাকার সানিলা মহল্লার ফজলুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িতে পাঁচটি গরু রয়েছে। গরু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর বাধ্য হয়ে বাকিতে গোখাদ্য নিয়েছেন। খড়ের দোকানে প্রায় আট হাজার টাকা বাকি থাকায় এক দুধ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই টাকা অগ্রিম নিয়ে হালখাতায় খড়ের দেনা শোধ করতে এসেছেন। এ জন্য বাজারদরের চেয়ে কম দামে তাঁকে দুধ ব্যবসায়ীর কাছে দুধ বেচতে হবে।

হালখাতার আয়োজন করা খড় ব্যবসায়ী সুজন মিয়া ও আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, বাকি আদায়ের জন্য তাঁদের দোকানে কয়েক বছর ধরে হালখাতার আয়োজন করা হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাকির পরিমাণ বেশি।

এদিকে নগদ দামে গোখাদ্য কিনেছেন, এমন অনেক খামারিও লোকসানে পড়ে গরু বেচতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব খামারির অভিযোগ, গত এক বছরে গোখাদ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় গরু পালনের খরচও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অথচ খামারের গরুর দুধের দাম তেমন বাড়েনি। ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়ে গরু বেচতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

বেড়া উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজা খানম বলেন, ‘গরু পালনে খরচ বাড়ায় অনেক খামারিই এবার বাকিতে গোখাদ্য কিনেছেন। বাকিতে গোখাদ্য কিনলে দাম কিছুটা বেশি পড়ে। গোখাদ্যের দোকানগুলোতে হালখাতা শুরু হওয়ায় অনেক খামারিই এখন গরু বিক্রি করে দেনা শোধ করছেন। তবে শুধু দেনা শোধের জন্যই নয়, গরু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায়ও অনেকে গরু বিক্রি করছেন। আমি নিজেই আমার খামারের আটটি গরু বেচে দিয়েছি।’