রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে মারধর ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) দুই শিক্ষার্থী। তবে ধর্ষণের হুমকির সেই অভিযোগ অস্বীকার করে ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আজ পাল্টা হেনস্তার অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেত্রী আতিফা। একই সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, প্রক্টর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন আতিফা। পরে বিকেলে থানায় গিয়ে জিডি করেন। আতিফা শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে আতিফা উল্লেখ করেন, ‘ফেসবুকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপমানজনক পোস্ট করেন প্রথমে অভিযোগ করা শিক্ষার্থী। সেখানে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন অন্যজন। ফেসবুকে লেখালেখির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষার্থীকে তিনি (আতিফা) ডাকেন এবং কাজটি করা ঠিক হয়নি, সেটা বোঝান। কিন্তু একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী সবার সামনে “আমি সিনিয়রদের কাউকেই...না” বলে গালি দেন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাঁকে উত্তেজিত করেন। পরে কথাগুলো রেকর্ড করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ করা শিক্ষার্থীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ফোন দেননি। এমনকি ২৬ ফেব্রুয়ারি বসার সময়ও তাঁর ব্যাপারে বাজে মন্তব্য করেননি। এরপরও তাঁর কথোপকথন রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে তাঁর বেঁচে থাকার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
আতিফা অভিযোগ করেন, ‘সারা দেশে আমার ছবি ব্যবহার করে, পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে অর্ধসত্য তথ্য দিয়ে, আমাকে রেপিস্ট সাজিয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আমি মানসিকভাবে পুরো ভেঙে পড়েছি। মনে হচ্ছে আমার বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই। এত দিন পড়াশোনা করে আমার স্বপ্নপূরণের যে ইচ্ছা ছিল, তা ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি। অতিরিক্ত ডিপ্রেশনের কারণে আমার আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
থানায় করা জিডিতে আতিফা বলেন, তিনি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুই শিক্ষার্থীর মাধ্যমে অপমানিত হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁদের মধ্যে একজন তাঁকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
এ বিষয়ে প্রথমে অভিযোগ করা শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দুজনকে আলাদাভাবে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা সেখানে সংখ্যায় অনেকজন ছিলেন। সেখানে গিয়ে কীভাবে হুমকি বা শারীরিক হেনস্তা করে তিনি ফিরে আসতে পারেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি কাউকে উল্লেখ করে কিছু লেখেননি।
প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, আজ তাঁরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। আগে আরও দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছিলেন। সবগুলো তিনি উপাচার্যের কাছে পাঠাবেন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘অভিযোগ তদন্ত কমিটির’ আহ্বায়ক অধ্যাপক আকতার বানুর কাছে অভিযোগ জমা দেন ইনস্টিটিউটের দুই শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাতে প্রক্টর দপ্তরে ২ মার্চ একই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিযোগকারীদের ডেকে জবানবন্দি নেওয়া শুরু করেন অধ্যাপক আকতার বানু।
২৬ ফেব্রুয়ারি ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দুই ঘণ্টা ধরে এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী পঞ্চম ব্যাচের ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিফা হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুর রহমান। তাঁরা একই ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। আর মারধরসহ নির্যাতনের বিষয়ে আরেকটি অভিযোগ করেন ইনস্টিটিউটের তৃতীয় ব্যাচের আরেক ছাত্র। ২৫ ফেব্রুয়ারি তাঁর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত শেষ করে বিচারের দাবিতে আজ মানববন্ধন করেছেন ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।