কুমিল্লার তিতাসের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর (৭) একটি চোখ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা করছে শিশুটির পরিবার। গত মঙ্গলবার উপজেলার বাতাকান্দি সেবা মাল্টিমিডিয়া আইডিয়াল স্কুলে এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিশুর নাম ফারহান ইসলাম রোহান (৭)। সে উপজেলার দক্ষিণ আকালিয়া গ্রামের ওমানপ্রবাসী মো. রবিউল ইসলামের ছেলে। গত বুধবার ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ফারহানের ডান চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফারহানের মা মায়া বেগম বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শিশুটির চাচা মোফাজ্জল হোসেন জানান, আজ শনিবার চিকিৎসক সর্বশেষ জানিয়েছেন, আগামী বুধবার ফারহানের চোখে পুনরায় আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হবে। দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকদের সভায় সিদ্বান্ত হবে ফারহানের আঘাতপ্রাপ্ত চোখ রাখা যাবে, না ফেলে দিতে হবে। ফারহানের চোখে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ জন্য এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ঘটনার বর্ণনায় মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, গত মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সৌরভ মিয়া মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। এ সুযোগে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। হইচই-চেঁচামেচি শুরু করে। এতে মো. সৌরভ মিয়ার মুঠোফোনে কথা বলতে বিঘ্ন ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের স্কেল শিক্ষার্থীদের দিকে ছুড়ে দেন। স্কেলটি শিক্ষার্থীদের ওপর না পড়ে টেবিলে পড়ে ভেঙে যায়। এ সময় ভয়ে জবুথবু হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। আতঙ্কের মধ্যেই ফারহানের একটি বই হঠাৎ টেবিল থেকে মাটিতে পড়ে যায়। ফারহান বইটি মাটি থেকে ওঠানোর সময় ওই শিক্ষক পুনরায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্লাস্টিকের ভাঙা স্কেলটি ফারহানের দিকে ছুড়ে মারেন। ভাঙা স্কেলটি সরাসরি ফারহানের ডান চোখে ঢুকে যায়। এতে ফারহান গুরুতর আহত হয়। তার ডান চোখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার ফার্মগেটের ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বুধবার রাতে ফারহানেরের ডান চোখে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ফারহানের চোখ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ ও চোখে থাকা প্রয়োজনীয় পানি ঝরে পড়ায় চোখ পানিশূন্য হয়ে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও তার চোখের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষক মো. সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার দিন দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদানকালে শিক্ষার্থী ফারহান দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। রাগের মাথায় তিনি তাঁর হাতে থাকা প্লাস্টিকের স্কেলটি দিয়ে ফারহানকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত স্কেলটি ফারহানের চোখে ঢুকে যায়। তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা পারভীন বানু জানান, শ্রেণিকক্ষে স্কেলের আঘাতে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া শিশুটির মায়ের কাছ থেকে তিনি লিখিত অভিযোগে পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালককে তিনি কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউএনও সুমাইয়া মমিন প্রথম আলোকে জানান, ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী নাজমুল হককেও ঘটনাটির পৃথক তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।