খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করা তরুণী ও তাঁর মাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাঁদের নিজ বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ভুক্তভোগীকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনার কাগজ হাতে পেয়ে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তরুণী ও তাঁর মাকে বাড়ি থেকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১–এ উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলার আবেদন করা হয়। বিকেলের দিকে ওই আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোসাম্মৎ দিলরুবা সুলতানা মামলাটি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য ডুমুরিয়া থানাকে নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামান ও গাজী আবদুল হক এবং আল আমিন গাজী, আক্তারুল আলম (সুমন), সাদ্দাম গাজী ও মো. ইমরান হোসাইন। এর মধ্যে এজাজ আহমেদ ধর্ষণ ও অন্যরা অপহরণ মামলার আসামি। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন ১০-১৫ জন। মামলাটি করেন ওই তরুণীর ভাই পরিচয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা ব্যক্তি।
আদালতে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে এজাজ আহমেদ ওই তরুণীকে শাহপুর বাজারে অবস্থিত তাঁর নিজস্ব কার্যালয়ে ধর্ষণ করে তাড়িয়ে দেন। পরে তরুণী ঘটনাটি তাঁর দূরসম্পর্কের খালাতো ভাইকে জানালে সেই ভাই তরুণীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠান। পরের দিন ওসিসির সামনে থেকে আসামি তৌহিদুজ্জামাসহ ১০-১৫ আসামি তরুণী ও তাঁর মাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে ওই তরুণী ও তাঁর মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করা হয়নি মর্মে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা থানায় নেওয়া হয়। পরে আবার সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে তাঁদের অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিষয়টি খুলনাসহ সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও সোনাডাঙ্গা ও ডুমুরিয়া থানা-পুলিশ ওই তরুণী ও তাঁর মাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাঁদের উদ্ধারের জন্য ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে মামলা নেওয়া হয়নি। এ কারণে আদালতে মামলা করা হয়েছে।
তবে ডুমুরিয়া থানার ওসি সুকান্ত সাহা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ডুমুরিয়া থানায় ওই সংক্রান্ত কেউ কোনো অভিযোগ কখনো নিয়ে আসেননি।
মামলার আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হলে পুলিশ ভিকটিমকে উদ্ধার করতে পারে। সে হিসেবে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। আগামীকাল হয়তো ভিকটিমকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।