এ বিষয়ে ইউএনও তদন্ত করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নতুন কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মসূচির ডিলাররা বাড়তি খরচের নামে ওই টাকা আদায় করছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত দুজন ডিলার জানিয়েছেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন স্থানে টাকা দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনা তদন্ত করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
উপজেলায় চলতি মার্চ মাসের চাল গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিতরণ শুরু হয়েছে, চলবে ১০ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু গতকাল সোমবার চাল বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
এ কার্যক্রমের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কার্ডপ্রতি ৪৫০ টাকা করে জমা নিয়ে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। তবে ডিলাররা নতুন কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিয়েছেন ৬৫০ টাকা করে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে নতুন কার্ড তৈরির খরচ এবং এলাকার মসজিদ ও এতিমখানার নামে অতিরিক্ত ওই টাকা তাঁরা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বল্প আয়ের লোকজন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই সুবিধা পাবেন। উপজেলায় এ কর্মসূচির আওতায় কার্ডধারী ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২৭০। তাঁদের মধ্যে এবার ২ হাজার ৮০২ জনের কার্ড বিভিন্ন কারণে বাতিল হলে নতুন নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। গত ডিসেম্বরে এই নতুন তালিকা থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও বাদ পড়েন ৬৫৩ জন। অর্থাৎ, ২ হাজার ১৪৯টি নাম তালিকাভুক্ত করে তাঁদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নতুন কার্ড দেওয়া হয়। নতুন-পুরোনো মিলে এবার উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬৭০ জন। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক চলতি বছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই পাঁচ মাস কর্মসূচির চাল দেওয়া হবে। প্রতি মাসে কার্ডধারী ব্যক্তিরা চাল পাবেন ৩০ কেজি করে।
* কার্ডপ্রতি ৪৫০ টাকা করে জমা নিয়ে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। * ডিলাররা নতুন কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে নিয়েছেন ৬৫০ টাকা করে।
গত রোববার উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ স্কুলেরপাড় গ্রামের আবদুস ছালেক ও অচিনগাছ গ্রামের সাবিনা আক্তার ডিলার ইকবাল বাহারের কাছ থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি করে চাল নিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ডিলার ইকবাল বাহার সব কার্ডধারী ব্যক্তির কাছে ৬৫০ টাকা করে নেওয়ার পরে চাল দিয়েছেন।
আবদুস ছালেক বলেন, ‘সরকার কইছে ৪৫০ টাকা করি নিয়া ৩০ কেজি চাউল দেবে। এ্যাটে আসিয়া নেইল ৬৫০ টাকা। কওচে নেলে নেও, না নেলে যাও।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইকবাল বাহার বলেন, ‘উপজেলার সব ডিলার বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে কার্ডপ্রতি নিয়েছি। টাকা নেওয়া হয়েছে খাদ্য অফিসে কার্ড তৈরির খরচসহ বিভিন্ন খরচের জন্য।’
উত্তর কোলকোন্দ গ্রামের সহিদুল ইসলাম, মাহমুদা বেগম ও দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের সাবিনা বেগমের অভিযোগ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার সুমি বেগমের বাবা আইয়ুব আলী তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ৬৫০ টাকা করে নিয়ে ৩০ কেজি করে চাল দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোলকোন্দ ইউনিয়নের সুমি বেগম খাদ্যবান্ধবের ডিলার হলেও তাঁর বাবা সব কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে আইয়ুব আলী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্য অফিসের জন্য ৫০ টাকা, মসজিদের জন্য ১০০ টাকা আর এতিমখানার জন্য ৫০ টাকা করে নিয়েছি।’
উপজেলার সব ডিলার বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে কার্ডপ্রতি নিয়েছি।ইকবাল বাহার, ডিলার
অভিযোগ রয়েছে, একইভাবে ওই ইউনিয়ন পরিষদের আরেক ডিলার মেনেকা মাহবুব সরকারও কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। মেনেকা মাহবুব সরকার কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ সরকারের স্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান আবদুর রউফ সরকার বলেন, ‘আমি অসুস্থ। কাউকে অতিরিক্ত টাকা নিতে বলিনি। আমার স্ত্রীও কারও কাছে অতিরিক্ত টাকা নেননি।’ ডিলার মেনেকা মাহবুব সরকারও বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত টাকা নিইনি।’
গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, বড়বিল, নোহালী ও দেবযানী ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলাররাও অতিরিক্ত ২০০ টাকা করে নিয়ে কার্ডধারী ব্যক্তিদের চাল দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রইচ উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, কার্ড তৈরির খরচ অফিস থেকে বহন করা হয়েছে। এই খরচ কোনো ডিলারকে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ৩০ কেজি চাল নিতে ৪৫০ টাকা লাগবে। কেউ যদি কোনো খরচের কথা বলে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও নাহিদ তামান্না মুঠোফোনে বলেন, ‘কার্ডধারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে চাল দেওয়ার অভিযোগ বিভিন্নভাবে পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছি। অভিযুক্ত ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’