মহাসড়কের পাশের সেই বর্জ্য অপসারণ, রোপণ করা হবে ফল ও ফুলবীজ

বর্জ্য অপসারণের পর গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা (ডানে)। জায়গাটিতে আট বছর ধরে শিল্পবর্জ্য ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছিল। রোববার বিকেলে
ছবি: সাদিক মৃধা

গাজীপুরের শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে বর্জের স্তূপ অপসারণ করেছে শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। রোববার বিকেল নাগাদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে ফুল ও ফলের বীজ রোপণের পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন।

গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় আট বছর ধরে জমা শিল্পবর্জ্যের ভাগাড় নিয়ে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রথম আলোয় ছবি প্রকাশিত হয়। সেদিনই দুপুর থেকেই বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করে শ্রীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান নিজে উপস্থিত থেকে অপসারণের কাজ তদারকি করেন।

রোববার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির প্রায় ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে দুই পাশে বর্জ্যের স্তূপ এখন আর নেই। ওই স্তূপের জায়গা বালু দিয়ে সমতল করা হয়েছে। বর্জ্যগুলো সড়কের পাশ থেকে অপসারণ করে বালু দেওয়ার ফলে কোনো দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কের এক পাশে কিছু জায়গাজুড়ে বালু দিয়ে সমান করে সেখানে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে সড়ক থেকে বর্জ্য অপসারণ করতে কাজ করছেন পৌরসভার লোকজন। আজও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করতে দেখেছেন তাঁরা। তবে বিকেল নাগাদ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৮ বছরের বেশি সময় ধরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সড়কের দুই পাশে ট্রাক, পিকআপ ও ছোট ছোট ভ্যানে করে ময়লা ফেলা হতো। গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার বাসিন্দারা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু ময়লা ফেলা বন্ধ করা যায়নি। সেখানে ময়লা ফেললেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ খুব বেশি বাধা দেয়নি। এমনকি পরিবেশ অধিদপ্তরকেও নির্বিকার ভূমিকায় দেখা গেছে।

গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী গ্রামের এনামুল হাসান বলেন, দীর্ঘদিনের ভোগান্তি এখন কমবে বলে মনে হচ্ছে। ময়লার স্তূপের কারণে আশপাশের বাসিন্দাদের ঘরের চাল দুই বছরও টিকত না। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছিলেন আশপাশের লোকজন। একই গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, শুধু অপসারণ করলেই হবে না, সেখানে শক্ত হাতে পরিবেশ রক্ষার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।

গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় আট বছর ধরে পৌর ও শিল্পবর্জ্য ফেলা হচ্ছিল সেখানে। বর্জ্য অপসারণ করতে বহুবার পরিবেশকর্মী ও সাধারণ জনগণ মানববন্ধনের মাধ্যমে দাবি জানিয়েছিলেন। এবার পরিবেশ দিবসের দিন প্রথম আলোয় বর্জ্যের স্তূপের ছবি ছাপার পরপরই সেখান থেকে ময়লা অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ১২ জুন সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে বর্জ্য অপসারণ করা স্থানে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ফুল ও ফলের বীজ রোপণ করা হবে। এতে সেখানে ভবিষ্যতে ময়লা ফেলার সুযোগ কমবে।

শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সড়কের দুই পাশের বর্জ্য অপসারণ করেছি। সেখানে আর কাউকে ময়লা ফেলতে দেওয়া হবে না। স্থানটি সুরক্ষিত করা হবে।’ পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক নয়ন মিয়া বলেন, বর্জ্য সরিয়ে দেওয়ার কাজটি ভালো হয়েছে। সেখানে ভবিষ্যতে পরিবেশদূষণের বিষয়ে খেয়াল রাখা হবে।