হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক লাঞ্ছিত

যশোর জেলা বিএনপির নেতাকে শোকজ, যুবদল নেতা বহিষ্কার

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে চেয়ার থেকে তুলে দিতে যান বিএনপির কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে
ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সংগৃহীত

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন–অর রশিদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিএনপি নেতা এ কে শরফুদ্দৌলা ওরফে ছোটলুকে কারণ দর্শানো (শোকজ) ও যুবদল নেতা হাবিবুল্লাহকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত এ কে শরফুদ্দৌলা যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও বিএনপির প্রয়াত নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের শ্যালক। হাবিবুল্লাহ যশোর জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহের (এমএসআর) দরপত্রের সব কাজ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হন বিএনপি নেতা শরফুদ্দৌলা। তাঁর নেতৃত্বে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন–অর রশিদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বিএনপির ওই নেতাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারাও বিব্রত।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানতে পেরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জেলা বিএনপি বিষয়টি নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য মনে করে এবং আমরা এর তীব্রভাবে নিন্দা জানাই।’

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কতিপয় ঠিকাদার ও সুপারের মধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। বিএনপি যেমন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই, তেমনি দরপত্র–সংক্রান্ত বা দখলদারির মতো কোনো বিষয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা দলে কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ফলে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক বা ঠিকাদারি কাজে কেউ অনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে ওই ব্যক্তি দলের যেকোনো স্তরের নেতা বা কর্মী হোন, দল তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। ফলে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহকে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিগত পতিত সরকারের টেন্ডারবাজি ও দখলবাজির কারণে প্রতিটা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। তাই কোনো রকম টেন্ডারবাজি ও দখলবাজি বিএনপি সমর্থন করে না, ভবিষ্যতেও করবে না। তাই বিএনপির অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কোনো ব্যক্তি যদি এমন ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্ট হন, তাহলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হবেন বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আজীবন সংগ্রামী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের পরিবারের কোনো সদস্য ঠিকাদারি করেন না। বরং রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে সব ধরনের দখলদারির বিষয় তিনি কঠোরভাবে দমন করেছেন, যা যশোরবাসী জানেন। যশোর জেলা বিএনপি সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল ও থাকবে।

শোকজের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য এ কে শরফুদ্দৌলার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার পর আমি আর আইনি কোনো পদক্ষেপে যাইনি। দুজনের মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।’ তবে গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘ক্ষমতাধর লোকজন তাঁরা। আমাদের কিছুই করার নেই। কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। তবে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’