কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’র (আরসা) সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে রওশন আলী (৫৫) নামের একজন রোহিঙ্গা নেতা নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৩) ই-২ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রওশন আলী ওই ব্লকের সাব-মাঝি (নেতা) ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গতকাল বিকেলে কাজ শেষে রওশন আলী আশ্রয়শিবিরের ই-২ ব্লকের বাজারে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় আরসার ছয় থেকে সাতজন সদস্য ঘটনাস্থলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এতে রওশন আলী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে রওশনের পেটে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। স্থানীয় রোহিঙ্গারা সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ রওশনকে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোহিঙ্গা একজন নেতা বলেন, রওশন আলী আরসাবিরোধী ছিলেন। আশ্রয়শিবিরে আরসার সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সম্পর্কে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন। রওশনের তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক দিনে চারজন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন। এ কারণে আরসা সন্ত্রাসীরা রওশনকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়।
আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী রওশন আলীকে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, রাতে রওশন আলীর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। গুলি ও ছুরিকাঘাতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে উখিয়ার কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে পাঁচটি পৃথক সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় দুজন আরসা সদস্যসহ পাঁচজন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একজন রোহিঙ্গা। গত মার্চে কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে ১০টি পৃথক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় এক শিশুসহ ৪ জন রোহিঙ্গা। গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১০ জন আরসা, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।