বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবদুল্লাহ আল আবিরের বাড়িতে যান সদ্য যোগদান করা বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। আজ বুধবার দুপুরে নগরের গোড়াচাঁদ দাশ সড়কে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবদুল্লাহ আল আবিরের বাড়িতে যান সদ্য যোগদান করা বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। আজ বুধবার দুপুরে নগরের গোড়াচাঁদ দাশ সড়কে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত বরিশালের আবিরের পরিবারের পাশে প্রশাসন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গিয়ে শহীদ বরিশাল জেলার অন্তত ৩০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে শহীদ পরিবারের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে নগরের গোড়াচাঁদ দাশ রোডে আন্দোলনে নিহত আবদুল্লাহ আল আবিরের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান।

এর আগে আবিরের বাবা মিজানুর রহমানের হাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন। এ সময় আবিরের বাবা মিজানুর রহমান, মা পারভীন সুলতানা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবির তাঁদের একমাত্র ছেলে।

আবিরের স্বজনেরা জানান, গত ১৯ জুলাই বিকেলে বোনের বাসা থেকে কর্মস্থল বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে রাজধানীর বারিধারা এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন আবির (২৪)। আবির নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। ২০ জুলাই সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পরে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

পরিবার জানায়, নগরের গোরাচাঁদ দাশ রোডের ‘মাহমুদালয়’ নামে পুরোনা বাড়িতে বড় হয়েছেন আবির। বাড়িটির আবিরের বাবার মামা বাড়ি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে। মহল্লায় আবিরের পরিচিতি ছিল শান্ত ও সৌম্য এক তরুণ। সবার সঙ্গে প্রাণখুলে মিশতেন। ছিলেন পরোপকারী। ২০১৬ সালে বরিশাল উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন রাজধানীর মিরপুর বাংলা কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর বরিশালে ফিরে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

খেলাপাগল আবিরের পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না। গত বছর একমাত্র বড় বোন মারিয়া ইসলাম ভাইকে ঢাকায় নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করেন। এরপর আবির বোনের বাসায়ই থাকতেন। ২৯ জুলাই তাঁকে নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ‘এখন লিখে কী করবেন, আমার বাবারে তো আর ফিরাইয়া দিতে পারবেন না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।

আবিরের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আন্দোলনে বরিশাল জেলায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন শহীদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁদের তালিকা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী এসব পরিবারের পাশে দাঁড়াবে সরকার। এ লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁরা পর্যায়ক্রমে সবার পরিবারের কাছে যাবেন এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সহায়তা দেবেন।

এ সময় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনদীপ ঘরাই, সহকারী কমিশনার আবু জাফর মজুমদার, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।