বিএনপির মহাসমাবেশ

সিলেট থেকে ভাগে ভাগে ঢাকায় আসছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা

বিএনপি
বিএনপি

ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অন্য সময়ের মতো একত্রে না এসে খণ্ড খণ্ড ভাগে ঢাকায় আসার কৌশল অবলম্বন করছেন। মূলত পুলিশের তল্লাশি আর হয়রানি এড়াতেই দলটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে হাজারো নেতা-কর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন বলে দলটি নিশ্চিত করেছে।

ঢাকায় পৌঁছে যাওয়া সিলেট বিএনপির সাতজন নেতার সঙ্গে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, বিগত সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীতে যাওয়ার পথে পুলিশের তল্লাশির কবলে পড়েন নেতা-কর্মীরা। এবার সেটা এড়াতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী গত সোমবার (তিন দিন আগে) থেকেই তাঁরা খণ্ড খণ্ড ভাগে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি জানান, সর্বশেষ ঢাকায় আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে সিলেট বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের চার নেতা-কর্মী পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তবে এবার গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে বাঁচতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য অনেকটা গোপনেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। দলীয় উদ্যোগে নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে খণ্ড খণ্ডভাবে সবাই ঢাকায় যাচ্ছেন।

একটি যাত্রীবাহী গণপরিবহনে কোনোভাবেই যেন ৫ কিংবা ১০ জনের বেশি নেতা-কর্মী না থাকেন, সেটি দল থেকে বলে দেওয়া হয়েছে।

জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও বিমানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সোমবার ঢাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। বিশেষ করে উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদধারী নেতাদের মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। যেসব নেতা-কর্মী ঢাকায় যাচ্ছেন, তাঁদের নাম-পদবিসহ তালিকাও করে রাখা হচ্ছে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকায় কয়েকটি স্থানে জড়ো হয়ে এসব নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন।

বিএনপির নেতৃস্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে সিলেট জেলা থেকে চার–পাঁচ হাজার নেতা-কর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেবেন বলে তাঁরা অনুমান করছেন। প্রত্যেক প্রভাবশালী নেতাকে তাঁদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিতে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি অনুরোধ করেছে। একই সঙ্গে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও যেন ঢাকায় যান, সে বার্তাও জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

সিলেট বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন নেতা বলেন, পথে গাড়ি থামিয়ে পুলিশ তল্লাশির কথা বলে হয়রানি করতে পারে বলে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ পড়লে তাঁরা যেন চিকিৎসা কিংবা জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাচ্ছেন বলে পুলিশকে জানান, এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি যাত্রীবাহী গণপরিবহনে কোনোভাবেই যেন ৫ কিংবা ১০ জনের বেশি নেতা-কর্মী না থাকেন, সেটিও বলে দেওয়া আছে। তবে মুঠোফোনে যেন একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন, সেটাও দল থেকে বলা আছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় যেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা না যেতে পারেন, সে জন্য পুলিশ ও প্রশাসন নানাভাবে চাপ তৈরি করছে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে যেন ঢাকায় নেতা-কর্মীরা যেতে পারেন, সে জন্য দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। এতে আমরা সফলও হয়েছি। অনেকেই এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। বাকিরাও পৌঁছে যাবেন। তবে কৌশলগত কারণেই ঢাকায় কীভাবে আমরা আসছি, সেটা প্রকাশ করছি না।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসমাবেশে যেন সবাই যোগ দেন, এ বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সবার অংশগ্রহণে একটা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেই আমরা মনে করছি।’