কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে নিচু জমিতে প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়ার পর এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার খসরু।
আজ শুক্রবার বিকেলে শহরের হিলডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ, আবু সুফিয়ান, জাহিদ ইকবাল, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেলসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।
উভয় পক্ষ ঘটনার মীমাংসা করলেও ইউএনওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে এ ধরনের কটুবাক্য আশা করা যায় না।’
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম সাইদুল ফরহাদ। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট’-এর কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।
সাইদুল ফরহাদ জানিয়েছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার তাঁর অফিশিয়াল মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করেন সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে। এ সময় সংবাদ প্রকাশের কারণ জানতে চেয়ে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। রেকর্ড করা ওই অডিও কলটি সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল রাতের ওই অডিও কলে ইউএনওকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই কত বড় সাংবাদিক হইছছ? তুই তো টেকনাফের প্রতিনিধি না।’ এ সময় সাইদুল ফরহাদ নিজেকে জেলা প্রতিনিধি পরিচয় দিলে ইউএনও তাঁকে বলেন, ‘কিসের জেলা প্রতিনিধি। সেদিন তোর বাবা যিনি আসছিল, যে তোর পরিচয় দিছিল সেইজন্য তোর ফোন আমি ধরেছিলাম। তুই যা লিখছছ পুরোটাই মিথ্যা।’
এ সময় সাংবাদিক ফরহাদ ইউএনওকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?’ তখন ইউএনও বলেন, ‘তোর সাথে যে আমি কথা বলতেছিলাম তখনো তো আমি ওই স্পটে ছিলাম ব্যাটা। তুই যে নিউজটা করছছ সেটা মিথ্যা,...। তুই বলছছ যে ঘর পানিতে ভাসছে। তুই যখন আমাকে ফোন দিয়েছিস, তখনো আমি স্পটে ছিলাম। আমার সিনিয়র স্যার ছিল স্পটে।’
ইউএনওর এমন গালাগালের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সার্কিট হাউসের বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন সাংবাদিকের সঙ্গে দায়িত্বশীল সরকারি একজন কর্মকর্তা এভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে কথা বলতে পারেন না। এই ইউএনও টেকনাফে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাঁকে দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে আমরা বৈঠকে দাবি তুলেছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ইউএনও মোহাম্মদ কায়সারের সরকারি মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে তাঁর লেখা একটা প্রতিবেদন গতকাল বিকেলে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে এমন অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ইউএনও। জেলার সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ইউএনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসকও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’