ময়মনসিংহ বিভাগীয় বইমেলায় শিশুতোষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ে পাঠকদের চাহিদা বেশি। মঙ্গলবার নগরের টাউন হল চত্বরে
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বইমেলায় শিশুতোষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ে পাঠকদের চাহিদা বেশি। মঙ্গলবার নগরের টাউন হল চত্বরে

বেচাকেনা কম হলেও দর্শনার্থী বাড়ছে, চাহিদা বেশি শিশুতোষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ের

ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল চত্বরে চলছে বিভাগীয় বইমেলা। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত মেলা ঘুরে দেখা গেল, শিশুতোষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এখনো বেচাকেনা সেভাবে জমে না উঠলেও মেলায় প্রতিদিন দর্শনার্থী বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মেলা চত্বরে থাকছে প্রতিদিন নানা অনুষ্ঠানও।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ১৫ নভেম্বর এ মেলা শুরু হয়েছে। চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে মেলার কার্যক্রম। মেলায় ৮টি সরকারি, ৫৭টি বেসরকারি ও ৬টি সেবাধর্মী স্টল ও প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিয়েছে। মেলায় দর্শনার্থী টানতে প্রতিদিন বিকেল থেকেই আলোচনা ও নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন রাখা হয় মুক্তমঞ্চে।

আজ মেলা ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেলায় এসেছেন। বইয়ের ব্যাগ কাঁধে শিশু শিক্ষার্থীরা মেলার স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে বই দেখছে। শিশুদের সঙ্গে অনেক অভিভাবকও এসেছেন। মেলায় অন্তত ১০টি স্টল ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। বিক্রেতারা জানান, শিশুতোষ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে থাকা ছোট বইয়ের ক্রেতা বেশি। বেশি দামের বইয়ের ক্রেতা কম।

বাতিঘর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. মমিন আলী বলেন, মেলায় বাচ্চাদের বইয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া কমিকস ও কিছু ইসলামি বইয়ের চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, বইয়ের দাম বেশি থাকায় ক্রেতারা বইয়ের দাম দেখে চলে যাচ্ছেন। পাঠকেরা চান ৩০০ টাকার নিচের বই। গতকাল মাত্র ছয় হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন।

নগরের মুসলিম হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুর রহমান মেলার একটি স্টলে বিজ্ঞানভিত্তিক বই দেখছিল। জানাল, বড় হয়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তার আগ্রহ। এ জন্য মেলায় এসে বিজ্ঞানভিত্তিক বই দেখছে।

আদর্শ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী খায়রুল ইসলাম জানালেন, এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো মেলায় স্টল দিয়েছেন। এবার বিজ্ঞান, চাকরিবাকরি ও গণিত বইয়ের চাহিদা বেশি তাঁদের স্টলে। রাজনৈতিক বইয়েরও চাহিদা আছে। তিনি বলেন, ‘মেলার শুরু থেকে গতকাল সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকার বই বিক্রি করতে পেরেছি।’

গ্রন্থরাজ্য প্রকাশনী থেকে ‘পিনবল’ ও ‘ভ্রম’ নামে দুটি রহস্য উপন্যাসের বই কিনেছেন দুই বান্ধবী শাম্মি আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার। তাঁরা নগরের আনন্দ মোহন কলেজে পড়েন। বললেন, ‘অনেক রহস্য থাকে, লেখকের লেখা ভালো থাকলে পড়ে অনেক ভালো লাগে।’ প্রকাশনী সংস্থাটির বিক্রয়কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ‘থ্রিলার বইয়ের চাহিদা বেশি। তবে বিক্রি আশানুরূপ হচ্ছে না।’

ছায়াবীথি পাবলিকেশনসের বিক্রয়কর্মী ফারজানা লিমা বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ও জহির রায়হানের বইয়ের চাহিদা আছে। এ ছাড়া কম বাজেটের ছোট বইগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। বড়দের চেয়ে শিশুতোষ বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। একুশে বইমেলায় যেসব বইয়ের অনেক চাহিদা থাকে, এখানে সেসব বইয়ের চাহিদা নেই। অন্য প্রকাশের বিক্রয়কর্মী হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এখানে হুমায়ূন আহমেদ ও সাদাত হোসাইনের বইয়ের চাহিদা বেশি। মেলায় অনেক লোক আসছেন, বই দেখছে। কিন্তু ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে বই খোঁজেন।’

আজ বিকেলেও টাউন হলের মুক্তমঞ্চে বইমেলা উপলক্ষে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাঠ কর্মকর্তা আফসানা আক্তার বলেন, মেলায় প্রতিদিন দর্শনার্থী বাড়ছে। স্টলগুলোতেও বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। এখন সবাই নিজেদের ইচ্ছেমতো বই কিনছেন। মেলার শেষ দিকে বিক্রি আরও বাড়বে। মেলা জমজমাট করতে প্রতিদিন নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনও থাকছে বলে তিনি জানান।