মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে নারী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার জেরে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার কামারগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কিশোরের নাম মো. নীরব হোসেন (১৭)। সে উপজেলার মধ্য কামারগাঁও এলাকার প্রয়াত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। স্থানীয় কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ে সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পরে লৌহজং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় আবার তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার কাজী ফজলুল হক উচ্চবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ছিল। ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ের ফটকের সামনে কয়েকজন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিলেন মাগডাল গ্রামের তরুণ আরেফিনসহ আরও কয়েকজন। বিষয়টি দেখে নীরব, কাজী ওহিদুলসহ (২০) তিনজন প্রতিবাদ করেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের ঝগড়া থামিয়ে যার যার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ বিকেলে কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে বসে ছিলেন নীরব ও ওহিদুল। গতকালের ঘটনার জেরে আরেফিনসহ ১০-১২ জন তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় ওহিদুল পালাতে পারলেও নীরব পালাতে পারেনি। হামলাকারীরা নীরবকে ছুরিকাঘাত করে পাশের একটি খালে ফেলে যান। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ওই কিশোরকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই সে মারা গিয়েছিল। তার বুকে ধারালো ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কাজী ওহিদুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরেফিনদের বড় একটি কিশোর গ্যাং আছে। ওরা প্রায়ই ইভ টিজিং, মারামারি, ঝগড়া-বিবাদ করে। গতকাল আমরা ওদের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাইনি। ওরা ঝামেলা করতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মীমাংসা করে দেন। আজকে আমাদের ওপর হামলা করে। আমি কোনোমতে পালাতে পারলেও ওরা নীরবকে মেরে ফেলেছে। এ ঘটনায় জড়িত সবার বিচার দাবি করছি।’
ভাগ্যকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী মনোয়ার হেসেনও গতকালের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আরেফিন কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। গতকালের ঘটনার জেরে আজ নীরবকে তাঁরা হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা খুবই ভয়ংকর। কয়েক মাস আগে ভাঘরার চরে একটি হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও ওরা জড়িত ছিল।’
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আরেফিনসহ অন্যরা এলাকাছাড়া। তাঁদের মুঠোফোন নম্বর না থাকায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ্-আল-তায়েবীর বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতা থেকে হত্যাকাণ্ডটি হতে পারে। তবে কী নিয়ে শত্রুতা ছিল, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগী ও হামলাকারীরা সবাই সমবয়সী। তারা গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ আসেনি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।