পঞ্চগড়ে কথিত প্রেমিকের সঙ্গে এক কিশোরীকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে মোমিনুল ইসলাম (২২) নামের এক ইজিবাইকচালককে পেটানো হয়েছে। ঘটনার ১২ দিন পর গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহেরপাড়ায় নিজ বাড়িতে ওই তরুণ মারা যান।
মৃত্যুর খবর জানাজানির পর আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাকলাহাট এলাকায় পঞ্চগড়-চাকলাহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ইজিবাইক চালকেরা। পরে পুলিশ এসে বাড়ি থেকে নিহত মোমিনুলের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় মোমিনুলের বাবা মো. ইব্রাহীম বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত এজাহার দিয়েছেন।
নিহত মোমিনুল ইসলাম উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের দিনমজুর ইব্রাহীমের একমাত্র ছেলে। ১ সেপ্টেম্বর একই এলাকার চার ব্যক্তি মোমিনুলকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করেছিলেন। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়িতে এনেছিলেন। টাকার অভাবে তাঁর উন্নত চিকিৎসা দিতে পারছিল না পরিবার।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও লিখিত এজাহার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি চাকলাহাট ইউনিয়নের মেহেরপাড়া এলাকার এক বাসিন্দার মেয়ে (১৪) স্থানীয় এক তরুণের সঙ্গে পালিয়ে যায়। মোমিনুল তাঁর ইজিবাইকে তাঁদের পালাতে সহায়তা করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে ১ সেপ্টেম্বর রাতে মেহেরপাড়া এলাকার নুরু প্রামাণিক (৬৫) ও তাঁর ছেলে লিমন (৫০), রিপন (৪৫) ও তুহিন (২২) স্থানীয় সিও বাজার থেকে মোমিনুলকে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটান। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে আনেন।
পরদিন সকালে মোমিনুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বজনেরা তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। টাকার অভাবে দুই দিন পর তাঁকে বাড়িতে আনা হয়। এরই মধ্যে গতকাল রাতে অসুস্থতা বেড়ে গিয়ে তিনি মারা যান।
মোমিনুলের বাবা মো. ইব্রাহীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম করতে পারি না। ছেলেটাই ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাত। মারধরের কারণে কয়েক দিন ধরে রক্তবমি করছিল। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। শনিবার কিছু টাকা ধার করে রংপুরে নিতে চেয়েছিলাম। তার আগেই মারা গেল। আমার ছেলেকে যারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যা করল, তাঁদের বিচার চাই।’
এদিকে ঘটনার পর অভিযুক্ত পরিবারটির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত তুহিনের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মোমিনুল ইসলাম নামের ওই ইজিবাইকচালক মারা যাওয়ার ঘটনায় তাঁর বাবা একটি এজাহার দিয়েছেন। সেটি মামলা হিসেবে রুজুর করার প্রক্রিয়া চলছে। লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।