মাদ্রাসাটিতে গত তিন বছরে দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৭ শতাংশের ওপরে। তবে এ বছর ২৪ জন পরীক্ষার্থীর কেউই পাস করতে পারেনি। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার খয়েরবাড়ি মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসার এমন ফলাফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরা বলছেন, দাখিল পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানে পাসের হার বরাবরই ভালো। এ বছরের ফলাফল অপ্রত্যাশিত। ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য তাঁরা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করবেন।
চলতি বছর দাখিল পরীক্ষায় খয়েরবাড়ি মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গতকাল রোববার দুপুরে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দাখিল পরীক্ষায় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি। ২০২৩ সালে দাখিল পরীক্ষায় ২৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৪ জন পাস করেছিল; পাসের হার ছিল ৮৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ২১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ১৭ জন। আর ২০২১ সালে ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করে ১৯ জন।
১৯৮৫ সালে খয়েরবাড়ি মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর পরীক্ষায় পাসও করেছে শিক্ষার্থীরা। এত বছর পর হঠাৎ প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করায় এ নিয়ে এলাকায় শোরগোল পড়েছে। বর্তমান মাদ্রাসায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০।
ফল বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে আজ সোমবার সকালে প্রতিষ্ঠানের সুপারিনটেন্ডেন্ট আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসায় এমন ফল বিপর্যয় হয়নি। এই ফলাফল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। চলতি বছরেও কয়েকজন মেধাবী শিক্ষাথী ছিল। এ রকম খারাপ ফল হওয়ার কথা নয়। ফলাফল পুনর্মূল্যায়নের জন্য মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হবে।’
দাখিল পরীক্ষার এমন ফলাফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। এ জন্য তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।
দাখিল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবুল ফাজেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে নবম শ্রেণিতে থাকা পর্যন্ত আমি এই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ছিলাম। এখন এই মাদ্রাসায় কোনো লেখাপড়া হয় না। মাদ্রাসার মাস্টাররা ক্লাসে গল্প করেই সময় পার করেন। মাদ্রাসার সুপার (সুপারিনটেন্ডেন্ট) ঠিকমতো মাদ্রাসায় আসেন না।’
এ বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। আমি এখন সভাপতি। আমি নিয়মিত মাদ্রাসায় গিয়ে লেখাপড়া ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজখবর নিই। এই মাদ্রাসা তো উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছে। এখন রেজাল্ট কেন খারাপ হলো, সেটি তো বুঝতে পারছি না। মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তারপর কী করা যায়, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মণ্ডল বলেন, ‘খয়েরবাড়ি মির্জাপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে শতভাগ ফেল করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধানকে একটি চিঠি দেওয়া হবে। কী জবাব আসে, সেটি দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’