রাজশাহী নগরীর ঘোড়া চত্বর এলাকায় নির্মাণাধীন একটি উড়ালসড়ক
রাজশাহী নগরীর ঘোড়া চত্বর এলাকায় নির্মাণাধীন একটি উড়ালসড়ক

রাজশাহী নগরে ‘অপ্রয়োজনীয়’ একটি উড়ালসড়কের নির্মাণ স্থগিত ও আরেকটি বন্ধের দাবি

রাজশাহীতে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘অপরিকল্পিত’ উল্লেখ করে একটি উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ স্থগিত করা হয়েছে। উড়ালসড়কটি দরপত্র আহ্বান পর্যায়ে ছিল। আরেকটি নির্মাণাধীন উড়ালসড়ক বন্ধের দাবিতে আজ মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘যেসব প্রকল্প জনবান্ধব নয় কিংবা প্রয়োজন নেই, সেগুলো বাতিল করা হচ্ছে। নগরের ভদ্রার ফ্লাইওভারটির কাজ যেহেতু শুরু হয়নি, সেটি আমরা বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। তবে যে প্রকল্পের একটা বড় অংশ বাস্তবায়িত হয়ে গেছে, সেগুলো এই মুহূর্তে বাতিল করা কঠিন। কারণ, সেখানে রাষ্ট্রের অর্থ বিনিয়োগ হয়ে গেছে। এ জন্য অন্যগুলো বাতিল করা যাচ্ছে না।’

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান মেয়র থাকাকালে উড়ালসড়কগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প থেকে সেগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা। ট্রেন যাওয়া-আসার সময় যেন গাড়ি আটকে থাকতে না হয়, সে জন্য উড়ালসড়কগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান উদ্বোধনের পর চারটি উড়ালসড়কের নির্মাণকাজও শুরু হয়। তবে একটির কাজের দরপত্র আহ্বান হয়নি। সরকারের পতনের পর সেটি বাতিলের জন্য সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এটি নগরের ভদ্রা এলাকায় রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত বলে ইতিমধ্যে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে একটি উড়ালসড়কের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ১২০ কোটি টাকার একটি উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্প থেকে বাদ দিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও ৫৪০ কোটি টাকার আরও চারটির কাজ চলমান। গত বছরের শেষের দিকে সেগুলোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মধ্যে নগরের সিটি বাইপাস সড়কে রায়পাড়া রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বন্ধগেট রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরও কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৩৫ ভাগ। নগরের নতুন বিলশিমলা রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন উড়ালসড়কটির কাজ ৩২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এ ছাড়া নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর রেলক্রসিংয়ের ওপর নির্মাণাধীন আরেকটি ফ্লাইওভারের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এটির কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ। নিউমার্কেট পর্যন্ত হওয়া এই উড়ালসড়কটির কাজ বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। আজ সকালে নিউমার্কেট এলাকায় মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁরা বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীরের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর আরও দুটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

তাঁরা বলছেন, রাজশাহী শহরে কখনো সেভাবে যানজট হয় না। শহরে যেসব গণপরিবহন আছে, সেগুলো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে চলাচলের মতো নয়। এ ক্ষেত্রে রাজশাহীতে উড়ালসড়ক একটি অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প। এখন যেগুলোর প্রয়োজন নেই, তা নির্মাণ করে জনগণের অর্থ খরচ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

জানতে চাইলে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (উন্নয়ন) মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচটি ফ্লাইওভারের পরিকল্পনা থাকলেও ভদ্রা এলাকার ফ্লাইওভারটির কাজ করা হবে না বলে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটির দরপত্র আহ্বান হয়নি বলে সম্ভব হয়েছে। অন্য চারটির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে এলাকাবাসীর বাধার কারণে নিউমার্কেট এলাকার ফ্লাইওভারটির কাজ আপাতত বন্ধ আছে।’

অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত বলে ভদ্রার উড়ালসড়ক নির্মাণ থেকে সিটি করপোরেশন সরে আসছে কি না, জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ব্যাপারটা কিছুটা ওই রকমই। তা ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও আপত্তি ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সবকিছুই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। যার কারণে ভদ্রার ফ্লাইওভারটি নির্মাণ থেকে আমরা সরে এসেছি।’