ইজারা দেওয়া দেবোত্তর সম্পত্তির জমিকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে হিন্দুধর্মাবলম্বী সাত-আটটি পরিবারের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ককটেল বিস্ফোরণ, ধানমাড়াই যন্ত্র, রিকশা-ভ্যান ও খড়ের পালায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে উপজেলার গোমস্তাপুর ইউনিয়নের গোঙ্গলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোমস্তাপুর ইউনিয়নের নয়াদিয়াড়ি ও বেলডাঙ্গা গ্রামের লোকজনের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গোঙ্গলপুর গ্রামটি এ দুই গ্রামের মধ্যে বিরোধপূর্ণ জমির পাশেই অবস্থিত। এ বিরোধে গোঙ্গলপুর গ্রামের লোকজন কোনো পক্ষেই ছিলেন না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। তাঁরা কেবল ওই জমিতে দিনমজুরের কাজ করতেন।
গোমস্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, গ্রাম পুলিশ সাইফুল ইসলাম, গোঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দা সুবল মল্লিক ও কৃষ্ণ মল্লিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নয়াদিয়াড়ি গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন থেকে রহনপুর মোহন্ত এস্টেটের দেবোত্তর সম্পত্তির জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। অন্যদিকে বেলডাঙ্গা গ্রামের লোকজন ওই জমি দখল করে ধান কাটার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ১৫ দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের চারজন আহত হয়েছেন। এর জের ধরে বুধবার বিকেলে বেলডাঙ্গা গ্রামের লোকজন গোঙ্গলপুরে হামলা চালান। হামলাকারীরা সাত-আটটি ঘরের টিনের চালে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটান। গ্রামের সুবল মল্লিকের রিকশা-ভ্যান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়। তাঁর বাড়িতে থাকা টিনের বড় বাক্স থেকে ৮০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান প্রতিপক্ষের লোকজন। রিপন মল্লিকের ধানমাড়াই মেশিনে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাড়ির টিনের বেড়া ক্ষতিগ্রস্ত করেন হামলাকারীরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রহনপুর মোহন্ত এস্টেটের দেবোত্তর সম্পত্তির ৪৪২ বিঘা জমি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। মোহন্ত ক্ষীতীশ চন্দ্র আচারি নয়াদিয়াড়ি গ্রামের উলা উদ্দিনের কাছে ২০২১ থেকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত ওই জমি ইজারা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। উলা উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজার সমর্থক। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বেলডাঙ্গা গ্রামের কিছু লোক ওই জমিগুলো দখলের চেষ্টা করছেন। আড়ালে থেকে এঁদের পেছনে থেকে স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ মদদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুবল মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনার পর পর গোমস্তাপুর থানা–পুলিশকে মুঠোফোনে একাধিকবার খবর দিলেও তাঁরা ঘটনাস্থলে আসেনি। হামলার ঘটনায় গ্রামের লোকজন আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছেন।
জানতে চাইলে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ দিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। বুধবার বিকেলে উভয় পক্ষের কয়েক শ লোক ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন। এ জন্য পোশাক পরা অবস্থায় পুলিশ সেখানে যায়নি। তবে সাদাপোশাকে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। তিনি কয়েকটি বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় বুধবার রাত নয়টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে গোঙ্গলপুরের হামলার শিকার ব্যক্তিরা থানায় মামলা করতে এসেছেন এবং মামলা হবে।