বিদ্যালয়ের জমিতে দোকান 

বিদ্যালয়ের জমি দখল করে ৮টি দোকান করা হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে যুবলীগ নেতাও আছেন।

ঝিনাইদহের মহেশপুরে নস্তি-উজ্জ্বলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা দোকানঘর

ঝিনাইদহের মহেশপুরের নস্তি-উজ্জ্বলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে আটটি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি। সর্বশেষ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনূর রহমান একটি মুদিদোকান নির্মাণ করেন।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যালয়ের নতুন ভবন কিছুটা দূরে সরে যাওয়ায় জায়গাটি ব্যবহার হচ্ছে না। এই সুযোগ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ওই স্থানে দোকানগুলো নির্মাণ করেছেন। তারা নিষেধ করলেও শুনছেন না। বিষয়টি শিক্ষকেরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহেশপুর পৌরসভা সীমান্ত শেষে রয়েছে নস্তি-উজ্জ্বলপুর গ্রাম। এই গ্রামের মধ্যে মহেশপুর-ভৈরবা সড়কের ধারে রয়েছে একটি ছোট বাজার। যে বাজারের সঙ্গে ছিল নস্তি-উজ্জ্বলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণ করায় বিদ্যালয় দক্ষিণে সরে গেছে।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নস্তি গ্রামের হেরাজ তুল্ল্যা নস্তি-উজ্জ্বলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ৩৮ শতক জমি দান করেন। ওই জমিতে ১৯৫৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ৩৩ শতক জমি কিনে দক্ষিণ দিকে নতুন ভবন করা হয়েছে। ৩৮ শতক জমির ওপর দুটি পুরোনো ভবন রয়েছে। নতুন ভবনে ক্লাস চলছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩৬ এবং শিক্ষক আছেন ৬ জন।

প্রধান শিক্ষক আকলিমা চৌধুরী বলেন, আগে বিদ্যালয়টি যে স্থানে ছিল, সেখানে ৩৮ শতক জমি থাকলেও ওই জমির মধ্য দিয়ে মহেশপুর-ভৈরবা পিচঢালাই সড়ক চলে গেছে। এটি খুব ব্যস্ত সড়ক। এই সড়কের দুই পাশে ছিল বিদ্যালয়ের দুটি ভবন। দুই পাশে ক্লাস চালাতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হতো শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় এলাকার লোকজন বিদ্যালয়ের নতুন ভবন একটু দূরে করার পরিকল্পনা নেন। সেখানে ৩৩ শতক জমি কিনে ২০০৯ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করেন। এর পর থেকে ওই স্থানে বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, আগে যে স্থানে বিদ্যালয়ের ভবনটি ছিল, সেখানে বর্তমানে ক্লাস না হওয়ায় স্থানীয় এক শ্রেণির মানুষ জায়গা দখল করতে শুরু করেছেন। ওই স্থানে তবিবুর রহমান, রুহুল আমিন, জসিম উদ্দিন, খাদেম আলী, কামাল হোসেন, সাইদুল ইসলাম ও শাহিনুর রহমান দোকান গড়ে তুলেছেন। কাঠ দিয়ে ঘর করলেও বর্তমানে পাকা ঘর করতে শুরু করেছেন। এ বিষয়ে তাঁরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আপত্তি জানালেও কোনো কাজে আসেনি। তিনি আরও বলেন, যাঁরা দখলে নিয়েছেন, তাঁদের একাধিকবার নিষেধ করার পরও কোনো কাজে না আসায় তাঁরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, ততক্ষণ প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখে রাখার দায়িত্ব তাঁর। কিন্তু এলাকার এক শ্রেণির মানুষ পড়ে থাকা জায়গা বলে জোর করে দখল করছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের জায়গার দখলদার লাটিমা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনূর রহমান বলেন, তিনি বিদ্যালয়ের ঘরের সামনে ঘর নির্মাণ করেছেন এটা ঠিক, কিন্তু জায়গাটি বিদ্যালয়ের নয়। এটা সড়ক ও জনপথের জায়গা। তিনি আরও বলেন, জায়গাটি ব্যবহার হচ্ছে না, তাই ঘর করে ব্যবসা করছেন। সবাইকে উঠিয়ে দিলে তিনিও উঠে যাবেন। 

মহেশপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান জানান, সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি শিক্ষকেরা তাঁকে অবহিত করেছেন, তিনিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা দ্রুত এগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেবেন।