‘স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ ফল ধরে রাখতে হবে’

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় শিখো-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা। শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরতলির নেহাল গ্রিন পার্কে
ছবি: প্রথম আলো

গত তিন দিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকেও ছিল মেঘলা আকাশ। তবে বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির সম্ভাবনার মধ্যেই কিশোরগঞ্জ শহরতলির নেহাল গ্রিন পার্ক কৃতী শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। এখানেই আজ উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সকাল সাড়ে আটটা বাজার আগেই শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ সেলফি তোলে, কেউ আবার পার্কের আনাচকানাচে গিয়ে ছবি তোলে। সহপাঠীরা একে অপরকে দেখে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে। কেউ স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে। বিদ্যালয়ের পাট চোকানোর কয়েক মাস পর সহপাঠী ও বন্ধুদের দেখা পেয়ে তারা ভীষণ উচ্ছ্বসিত। সঙ্গে অনেকের অভিভাবক ও শিক্ষকও আসেন। অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবে কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলান অতিথি ও শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সকাল সাড়ে আটটা থেকে তাঁরা জড়ো হতে থাকলেও নয়টায় নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাক্স ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মূল মিলনায়তনের পাশেই অভিভাবকদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি তাঁরা বিনা মূল্যে শুক্রবারের প্রথম আলো পড়েন।

কৃতী শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়ে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এক শিক্ষার্থী সেলফি তুলছে। শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরতলির নেহাল গ্রিন পার্কে

সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মিলনায়তন কানায় কানায় ভরে যায়। ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলায় শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। এরপর সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্যের পাশাপাশি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের শুভেচ্ছা বক্তব্যটি পাঠ করে শোনান প্রথম আলোর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজ।

কিশোরগঞ্জ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান ও বন্ধুসভার সদস্য আশিষ বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল হামিদ। এ ছাড়া অতিথি হিসেবে ছিলেন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কাজী করিম উল্লাহ, শিখো প্ল্যাটফর্মের দুজন শিক্ষক চিকিৎসক তানজিম আহমেদ ও মো. সাব্বির হোসেন। সব শেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর আঞ্চলিক সংবাদবিষয়ক সম্পাদক তুহিন সাইফুল্লাহ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক (ভৈরব) সুমন মোল্লা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরতলির নেহাল গ্রিন পার্কে

অধ্যক্ষ মো. আবদুল হামিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘মা-বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তোমাদের এ ফল ধরে রাখতে হবে। ভালো কাজের শপথ নিতে হবে এবং তোমাদেরকে ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই। মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করে তুলতে এ রকম আয়োজন খুবই দরকার। এ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে দেশ গড়ায় নেতৃত্ব দিতে হলে তোমাদের অবশ্যই সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই তোমরা দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পাবে।’

‘স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

অনুষ্ঠানের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখে। শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরতলির নেহাল গ্রিন পার্কে

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য অতিথিদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকা থেকে আসা জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অনিক সূত্রধর ও স্থানীয় শিল্পী কায়েসের পরিবেশনা শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখে।

অনুষ্ঠানে আসা কৃতী শিক্ষার্থী ফাইজা ফারহানা বলে, ‘আজকের দিনটা আমাদের জন্য। আমাদের ভাগ্য অনেক ভালো। অনুষ্ঠানে আসতে পারব কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে বৃষ্টি থেমে গেছে। তাই দূর থেকে এলেও আমার জন্য কষ্ট হয়নি।’

আরেক কৃতী শিক্ষার্থী ক্যামেলিয়া বলে, ‘অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা ও প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমাদের দেওয়া ক্রেস্ট নিয়ে একসঙ্গে বন্ধুরা ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখছি।’ আরেক কৃতী শিক্ষার্থী মেরাজুর রহমান বলে, ‘আজ আমি গর্বিত। আমরা চার বন্ধু মিলে একসঙ্গে অনুষ্ঠানে এসেছি। অনুষ্ঠান উপভোগ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। আমাদের উদ্দেশে এত সুন্দর আয়োজন, এ জন্য আমরা গর্বিত। ফলাফলের এ সাফল্য আমরা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’